নতুন বই এসেছে? নতুন বইয়ের তালিকাটি দিন প্লিজ। এখন পর্যন্ত বেস্ট সেলার (সর্বাধিক বিক্রি) বই কোনটি? এবার প্রকাশিত ময়ুখ চৌধুরী ও ওমর কায়সারের কাব্যগ্রন্থ আছে? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাশেদ রউফের লেখা প্রবন্ধের বইটি হবে? বিশ্বজিৎ চৌধুরী, শুকলাল দাশ ও জাহেদ মোতালেবের নতুন উপন্যাস পাওয়া যাবে? ভিড় ঠেলে প্রকাশনা স্টলগুলোর সামনে দাঁড়ালেই শোনা যায় পাঠকের এমন কথামালা। এদের কেউ পছন্দের লেখকের নাম উল্লেখ করছেন। কেউ তালিকা দেখে বাছাই করছেন। তবে চাওয়া একটাই, বইমেলায় আসা নতুন বই। বিক্রয়কর্মীরাও হাসিমুখে পাঠকের এ চাহিদা মিটান।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে তৃতীয়বারের মত চলছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল বুধবার ছিল মেলার চতুর্থ দিন। প্রথমদিনের মত গতকালও নতুন বইয়ের খোঁজ করছিলেন মেলায় আগতরা। নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ নিয়ে মেলায় আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী আফসানা দৈনিক আজাদীকে বলেন, বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই প্রকাশ করা বাংলাদেশে রীতিমত ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে। বেশিরভাগ প্রকাশক ও লেখকগণ এ সময়টাকেই বই প্রকাশের জন্য বেছে নেন। এ তালিকায় একেবারে নবীন লেখক যেমন আছেন তেমনি প্রতিষ্ঠিত লেখকরাও আছেন। পাঠক হিসেবে আমাদেরও ওই ট্র্যাডিশনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। পাঠকের কথার সূত্র ধরেই কথা হয় একাধিক প্রকাশক এবং তাদের প্রকাশনা স্টলের বিক্রয়কর্মীর সাথে। বেশিরভাগই জানিয়েছেন, প্রকাশিত সবগুলো বই এসে পৌঁছেনি। অবশ্য দুয়েকদিনের মধ্যেই বাকি বইগুলো চলে আসবে বলে জানান তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবির প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আহমদ মমতাজের ‘বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রাম’, ইলু ইলিয়াসের ‘একুশের পটভূমি ও সাহিত্যরূপ’, শাকিল আহমদের ‘আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম পর্ব’, রোকসানা আনোয়ারার ‘প্রিয়তম কি লিখি তোমায়’ ও আমিনুর রশীদ কাদেরীর ‘চা দেশে দেশে’। আবির প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল আবছার বলেন, ২৫ টি নতুন বই এসেছে। আত্ম উন্নয়নমূলক, মোটিভিশনাল বই বেশি চলছে। আগের মত কবিতা-উপন্যাস বা সাহিত্যের বই কম চলছে।
শৈলী প্রকাশনা থেকে রাশেদ রউফের ‘দশদিগন্তে বঙ্গবন্ধু’, বদরুল হুদা খান সম্পাদিত ‘ঐতিহ্যের সিআরবি চট্টগ্রামের ফুসফুস’, ড. এস এম মনির-উজ-জামানের ‘শ্রাবণধারা’, নাহিদা খানম সিমুর ‘ভালোবাসায় মাতোয়ারা’, সুবর্ণা দাশ মুনমুনের ‘পাখির ডানায় মন’ উল্লেখযোগ্য। শৈলী প্রকাশনার আরিফ রায়হান বলেন, ৩০টি নতুন বই আসছে। আরো সাতটি আসবে। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে শিশুতোষ গ্রন্থ বেশি।
এদিকে গতকাল লোক সমাগম বাড়লেও বিক্রি খুব বেশি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রকাশক। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনার চৌধুরী ফাহাদ বলেন, এবার বেচাবিক্রি আশাব্যাঞ্জক না। প্রচারণাটা খুব কম। প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা কম। যতটুকু হচ্ছে তা লেখক ও প্রকাশকগণের কল্যাণে। তারপরও সামনে বেচাবিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী। বাঙালি প্রকাশনার আফাজ উদ্দিন বলেন, প্রচারণা কম। মানুষও কম। বিক্রি কম। মেলার আয়োজকদের প্রচারনার উপর জোর দেয়া উচিত। সুচয়নী প্রকাশনার এক বিক্রয়কর্মী বলেন, বেচাবিক্রিতে হতাশ। ঢাকা থেকে আসলাম। দৈনিক খরচও উঠছে না। ২০২০ এ আসছিলাম, প্রতিদিন লোকজন ভরপুর ছিল। এবার প্রচারণা কম হওয়ায় লোকজন কম আসছে মনে হয়।
অক্ষরবৃত্তের দুর্জয় মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত ৩৩টি নতুন বই আসছে। আরো কিছু বই আসবে কয়েকদিনের মধ্যে। উপন্যাস এবং শিশুতোষ বই বেশি চলছে। একুশে ফেব্রুয়ারি একদিনই জমজমাট ছিল।
প্রসঙ্গত, মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা ও ছুটির দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদন করা হয়েছে এবারের মেলা। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল আছে।
আলোচনা সভা : গতকাল মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ৫২, ৬৬, ৬৯ এবং ৭১ এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনায় পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্য পূরণ করছে। সঠিকভাবে করোনার পরিস্থিতি মোকাবেলা ও কোভিড ভ্যাঙিন প্রদানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জনহিতকর এসব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এসব সফলতার মূলেই একুশের চেতনা কাজ করেছে।
নাট্যজন অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বই মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য বেলাল আহমেদ।
ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কারণে বইমেলা জিমনেসিয়াম চত্ত্বরটি ব্যবহারের সুযোগ হয়েছে। অন্যদিকে প্রকাশক, নাগরিক সমাজ সমন্বয়ের একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে বইমেলার মাধ্যমে। অভীক ওসমান বলেন, চট্টগ্রাম সর্বকালের সর্বযুগের আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি ভাষা আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকায় ছিল চট্টগ্রাম।