পাট শিল্পের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে হবে

| বুধবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

বেশ কয়েকটি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যবাধকতার নির্দেশ থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো পাইকারি ও খুচরা বাজার ছেয়ে গেছে প্লাস্টিক বস্তায়। এজন্য কোম্পানির মালিক ও সরকারের নজরদারির অভাবকে দুষছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতি বিশ্লেষকের বলেন, শতভাগ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় বাড়াতে হবে মন্ত্রণালয়কে। গত ২৭ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘এখনো প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য পরিবহন, বাধ্যতামূলক করার পর প্রায় ১০ বছর পার, পাটের বস্তার ব্যবহার আরো সীমিত হচ্ছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ ১৯টি পণ্যের পরিবহন ও মজুদের ক্ষেত্রে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। এসব পণ্যের ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সময় পাট অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়। অথচ বাধ্যতামূলক করার প্রায় ১০ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেলেও এখনো প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্যের পরিবহন ও মজুদ করা হচ্ছে। এসবের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে মোট তিনবার। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকার কারণে পুরো বাজার এখন প্লাস্টিকের বস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে। এতে পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি উদ্যোগও এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিকের বস্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানও নেই। এই সুযোগটাই মূলত কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা।

চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, আমদানির চাল আসছে প্লাস্টিকের বস্তায়। এখন সেইসব পণ্যের বস্তা পরিবর্তন করে বাজারজাত করা দুরূহ কাজ। বিষয়টি বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ দেশি চালের মিল মালিক প্লাস্টিকের বস্তায় চাল পরিবহন ও মজুদ করছেন। আমাদের কাছেও তারা প্লাস্টিক বস্তায় চাল পাঠাচ্ছেন। খাতুনগঞ্জের আটাময়দার একজন ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটাময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায়, আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ মিশে যায়। অনেক সময় ধুলাবালু বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটাময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটাময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটাময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

দেখা যাচ্ছে নগরীর পাইকারী ও খুচরা বাজারে আটা ময়দা চিনি ডালসহ বেশি ব্যবহৃত পণ্যেই দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তা। একই অবস্থা আমদানি করা চাল, ডাল, রসুন ও আদার বস্তায়। বিষয়টি স্বীকার করে মিল মালিকদের প্রতি দোষ চাপাচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ‘প্লাস্টিকের বস্তা থেকে যদি চটের বস্তার দাম কমিয়ে দিত সরকার তাহলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারতাম।’ মিল ফ্যাক্টরি থেকে যদি ওরা প্লাস্টিকের বদলে পাটের বস্তায় ভরে দেয় তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।’ তবে প্রান্তিক পর্যায়ে আইনের শতভাগ বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় জোরদারের পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় প্রশাসনের অংশীদারত্ব তৈরি না করতে পারলে তাহলে মাঠ পর্যায়ে এটা বাস্তবায়ন হবে না। প্লাস্টিকের বস্তা এবং পাটের বস্তার ভেতর দামের পার্থক্য বেশি থাকলে পাট ব্যবহারে আগ্রহী হবেন ব্যবসায়ীরা।’ উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।

পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়াতে পারলে মিলগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে। পাট আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত। পাটের জীবন রহস্য আমাদের দেশের বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন। দুনিয়া ব্যাপী পরিবেশবাদীরা প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। সকল দেশের পরিবেশকর্মীরা পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য লড়াই করছেন। পাট চাষ ও পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন ও বিপণনের সাথে কোটি কোটি মানুষ জড়িত রয়েছে শত বছরেরও আগের থেকে। পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্বের সাথে সাথে তার রয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বও।

পাট ও পাট শিল্পের যে সম্ভাবনা আমাদের দেশে রয়েছে, তাকে আগাতে হলে দায়িত্ব সচেতন মহলসহ কৃষক সংগঠনসমূহকে আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা হাজার হাজার পলিথিনের কারখানার মালিকরা সহজে হার মানবে না। লড়াই করেই পাট ও পাট শিল্পের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে