এক সময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট; তাই একে বলা হয় ‘সোনালি আঁশ’; পাটের সেই দিন ফেরানোর লক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় পাট দিবসের প্রচারে যে পাতার ছবি দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই পাতাকে ‘এক ধরনের পাট পাতা’ বলে দাবি করা হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দুজন গবেষক তা নাকচ করেছেন।
পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেছেন, এটা কোনোভাবেই পাট পাতা নয়। খবর বিডিনিউজের। পাটের সুদিন ফেরানোর লক্ষ্যে এই বছর থেকে ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালন হয়। প্রথম দিবসের স্লোগান ঠিক হয়েছে– ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ/পাট পণ্যের বাংলাদেশ’। রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সৌজন্যে ফেস্টুন চোখে পড়ে। তাতে পাটজাত পণ্যের সঙ্গে রয়েছে সবুজ পাতার ছবি। সেখানে খাঁজ কাটা সবুজ পাতা দেখে পথচারীদের অনেকেই এটা পাট পাতা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এটা আসলে কী পাতা, তা নিশ্চিত হতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্লান্ট টেঙনমিস্ট ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ছবির পাতাটি দেখে বলেন, এটা পাট পাতা নয়। এটা ভিন্ন জাতীয় কোনো উদ্ভিদের পাতা। পাটের পাতা সরল ও একক; আঙ্গুলের মতো এমন ছেঁড়া ছেঁড়া নয়। এ দুই ধরনের পাটের পাতার কোনোটাই এ ছবিতে ব্যবহার করা হয়নি।’
পাট দিবসের প্রচারের এই ছবি নিয়ে পাটকল করপোরেশন, বাংলাদেশ টেঙটাইল মিল করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেও তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়াও জানা যায়নি। এক কর্মকর্তা বলেন, পাট ও পাট জাতীয় ফসলের ৫৩টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে দেশি পাটের ১১টি, তোষা পাটের ৮টি, কেনাফের ৪টি, মেস্তার ৩টি জাতসহ ২৬টি উন্নত জাতের চাষ চলছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন এ ধরনের এক প্রজাতির পাট রয়েছে। সেই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।’ তবে সৈকত হালদারের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, ‘ছবিতে ব্যবহৃত পাতাটি ‘কেনাফ’ এর হতে পারে। এটাও এ ধরনের আঁশ তৈরি করে। তবে এটা পাট পাতা নয়।’