পাটি বুনে চলে ওদের সংসার

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই  | রবিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৫ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

পাটি বুনেই ওদের সংসার চলছে যুগ যুগ ধরে। কারো সাত পাঁচে নেই, কারো ধার ও ধারে না ওরা। মীরসরাই উপজেলার ৭নং কাটাছরা ইউনিয়নের রহিম মিস্ত্রী বাড়ির সুরজাহান আর মাসুদা । আবার শাশুড়ি আলেয়া ও । একই বাড়ির শাশুড়ি, বউ, কন্যা সকল নারীই সেখানে সমভাবে স্ব স্ব সংসারে অনন্য দৃষ্টান্ত।

সুরজাহান বেগমের ( ৪০) স্বামী জাফর আলম সিএনজি চালক। স্বামীর আয়ে ৪ সন্তানের পড়ালেখা সহ সকল খরচ সামাল দেয়া কষ্টকর। তাই সুরজাহান সংসারের কাজের পাশাপাশি বুনেন পাটি। একটি পাটি তৈরী করতে লাগে ২ দিন। সেই পাটি হাটে বিক্রি করে টাকা এনে দেন স্বামী। একটি পাটি ন্যুন্যতম ৬ শত টাকা বিক্রি হলে লাভ থাকে ৪ শত টাকা। এতে দৈনিক গড় আয় ২০০ টাকা। সংসারের সকলের সাথে সার্বক্ষনিক থেকে এই গত আয়ে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ সহ অনেক খরচ নিজেই করেন সুরজাহান। একই বাড়িতে তাঁরই ননদ মাসুদা আক্তার ( ২৮) জানান সে ও কৃষক বাবা শহিদুল হক এর সংসারে পাটি বুনে দৈনিক ২০০ টাকা গড়ে সাহায্য করতে সক্ষম। এতে মাসুদা ও খুশি বাবা মা ও খুশি। একই ভাবে বাড়ির প্রবীণ দাদি আলেয়া বেগম (৬৫) বলেন আমি ও বাড়ীর বউ আর ঝি দের সাথে প্রায়ই পাটি বানাই, বয়স হয়েছে বলে আমার একটা পাটিতে ৪৫ দিন লেগে যায়। তবু ও আমার ওষুধ এবং নিজের অন্যান্য খরচের টাকা এতে জোগাড় হয়ে যায়। এছাড়া বাড়ির অন্যন্য বধু ফরিদা বেগম (৪৭), রোকেয়া বেগম ( ৪৮), মোমেনা খাতুন (৪৩), ফেরদৌস আরা (৪৬), বাড়ির মেয়ে বিবি আয়েশা (৪২) সহ সকলেই নিজ নিজ সংসারে পাটি বুননের টাকা দিয়েই বাড়তি যোগান দিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছে। বেতের পাটির পাশাপাশি পাটি পাতা দিয়ে নামাজের বিছানা, ফুলের বটনি ও বানায় ওরা। একসময় শীতল পাটি বুনতো অনেকে। কিন্তু শীতল পাটিতে এখন সময় বেশী দিতে হয়, উপযুক্ত দাম ও পাওয়া যায়না। তাই বেতের পাটিই বানাচ্ছে। সবাইকেই নিজ নিজ সংসারের পুরুষরা তাদের পাটিপাতা, বেত আর বাঁশের কঞ্চি হাট থেকে এনে দেয়। আবার বিক্রি ও করে দেয়। মিঠাছরা হাটেই এসব পাটি তারা বিক্রি করে প্রতি হাটবার রবি ও বৃহস্প্রতিবার ভোরে। স্ব স্ব সংসারে ওরা মিলেমিশে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও সম্ভাবনার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। শুধু নারীদের ক্ষেত্রে ও নং বাড়ির পুরুষরা ও একে অন্যের পাটি বিক্রিতে, সরঞ্জাম কিনতে সাহায্য করে। সংসারে স্বচ্ছলতার সহযোগি শক্তি হিসেবে অনন্য দৃষ্টান্ত এই নারীরা সত্যিই সমাজের অনন্য দৃষ্টান্ত। ওদের সুখ দুঃখ জানতে চাইলে ওরা বলে দুবছর আগে করোনাকালে ও বন্ধ করেনি ওদের স্বাভাবিক কাজ, তখন ও হাটে পাটি বিক্রি করতে যেতে পারেনি কেউ। কিন্তু ওদের পাশে দাড়ায়নি কেউ তখন। নিজেরাই অনেক কষ্ট সয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলছে ওদেও সংগ্রাম। কারো ধার ধাওে না। শুধু সংগ্রাম চালিয়ে যায় ওরা। যদি কেউ পাশে দাড়াতো আরো উৎসাহ পেত, অনুপ্রাণিত হতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে সুজন ও মহিলা পরিষদের যৌথ মানববন্ধন
পরবর্তী নিবন্ধবিভিন্ন স্থানে ইফতার মাহফিল