পাটিতেই সচ্ছলতা

হার না মানা কয়েকজন নারীর গল্প

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার ৭ নং কাটাছরা ইউনিয়নের রহিম বক্স মিস্ত্রি বাড়ির সুরজাহান ও মাসুদা। সম্পর্কে ওরা ননদ-ভাবী। আছেন শাশুড়ি আলেয়াও। ওরা সবাই মিলে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। কীভাবে?
সুরজাহান বেগমের ( ৪০) স্বামী জাফর আলম সিএনজি চালক। স্বামীর আয়ে ৪ সন্তানের পড়ালেখাসহ সকল খরচ সামলানো কষ্টকর। তাই সুরজাহান সংসারের কাজের পাশাপাশি পাটি বোনেন। একটি পাটি তৈরি করতে লাগে দুদিন। সেই পাটি হাটে বিক্রি করে দেন স্বামী। একটি পাটি ৬শ টাকা বিক্রি হলে লাভ থাকে ৪শ টাকা। এতে দৈনিক গড় আয় ২০০ টাকা। এই আয়ে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচসহ প্রয়োজনীয় খরচ করেন সুরজাহান।
বাড়িতে আছেন ননদ মাসুদা আক্তার (২৫)। কৃষক বাবা শহিদুল হকের সংসারে পাটি বুনে দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা সাহায্য করেন। এতে মাসুদা খুশি, তার বাবা-মাও খুশি। আলেয়া বেগম (৬৫) বলেন, বাড়ির বউ-ঝিদের সাথে আমিও পাটি বানাই। বয়স হয়েছে বলে একটা পাটি বানাতে ৪-৫ দিন লেগে যায়। তবে আমার ওষুধ ও অন্যান্য খরচের টাকা এতে জোগাড় হয়। এছাড়া বাড়ির অন্যান্য বধূ ফরিদা বেগম (৪৫), রোকেয়া বেগম (৪৬), মোমেনা খাতুন (৪০), ফেরদৌস আরা (৪৪) ও বিবি আয়েশা (৩৮) পাটি বুনে বাড়তি টাকা যোগান দিয়ে নিজ নিজ সংসারে এনেছে সচ্ছলতা।
কেউ ৪-৫ দিনে একটি পাটি বানাচ্ছেন। কেউ সপ্তাহে একটি। তবে মাসুদা আর সুরজাহান দুদিনেই একটা পাটি বানান। বেতের পাটির পাশাপাশি পাটিপাতা দিয়ে মসল্লা, ফুলের বটনিও বানান তারা। এক সময় শীতল পাটি বুনতেন অনেকে। কিন্তু শীতল পাটিতে সময় বেশি দিতে হয়, তবে উপযুক্ত দাম পাওয়া যায় না। তাই বেতের পাটি বানাচ্ছেন তারা। নিজ নিজ সংসারের পুরুষরা তাদের পাটিপাতা, বেত আর বাঁশের কঞ্চি এনে দেন হাট থেকে। আবার বিক্রিও করে দেন। মিঠাছরা হাটে এসব পাটি বিক্রি করেন প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার। পাটি বুনন ও সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ওরা একে অপরের প্রতিযোগী নন। বরং সহযোগিতাই করেন।
কয়েকজন নারী আজাদীকে বলেন, এই করোনাকালেও বন্ধ হয়নি ওদের স্বাভাবিক কাজ। তখন হাটে পাটি বিক্রি করতে যেতে পারেননি কেউ। অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। তবে ওদের পাশে কেউ না দাঁড়ালেও পিছপা হননি। সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এসব নারী অনেকের জন্যই দৃষ্টান্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়র প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬