বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দিতে বাজেটে যে প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় সংসদে তার সমালোচনা করলেন ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরাও। গতকাল রোববার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। খবর বিডিনিউজের।
অর্থমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। এ বাজেটের বিশাল ব্যয় মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহে অর্থমন্ত্রী নতুন একটি পথ খুঁজে বের করেছেন। বিদেশ থাকা সম্পদের ‘দায়মুক্তির’ দিয়ে তিনি তা দেশে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর ফলে ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। ওই আয়ের উৎসব জানতে চাওয়া হবে না। এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান রোববার সংসদে বিষয়টি তোলেন। পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ফজলুর রহমান বলেন, যারা লুটপাট করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারও বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী এই করোনাকালীন সময়ে মানুষের জীবন রক্ষার যে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, সেখানে একদিকে মানুষকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। অপরদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা এই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে, সেটা রোধ করতে পারেননি।
অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, মানুষ সন্দেহ করছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করার জন্য বসে আছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হবে। যারা অবৈধভাবে টাকা লুটপাট করে সেই বৈধ করার জন্য এটি নিয়ে আসছেন। এটি দায়মুক্তি দিলে মানুষ উৎসাহী হবে অবৈধভাবে টাকা উপার্জনে।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, একদিকে মানুষ সৎ পথে আয় করতে যুদ্ধ করছে; অন্যদিকে লুটপাট করে যারা টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে, তারা সামান্য কিছু কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনবেন। দেখা যাবে চোররা হয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠ করদাতা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না। সমাজে এটার ইতিবাচক প্রভাব নেই। যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তারা যদি সৎ হতেন তাহলে টাকা দেশেই রাখতেন। চোর ধর্মের কথা শোনে না, এটা মাথায় রাখা উচিত।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ব্যাংক ডাকাতি করে টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে কী হবে? ডাকাতির মামলা হবে না? দুর্নীতি করলে মামলা হবে না? যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকে, এ সময় তিনি যদি টাকা ফিরিয়ে আনেন; তাহলে কি মামলা চলবে না?