পাচারকারীদের আস্তানা থেকে নারী-শিশুসহ ৮৪ জন উদ্ধার

টেকনাফে গহীন পাহাড়ে র‌্যাব ও বিজিবির অভিযান আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিন মানবপাচারকারী আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানব পাচারকারীদের আস্তানায় র‌্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে জিম্মি ৮৪ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে। এ সময় তিন মানবপাচারকারীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করা হয়। অভিযানে যৌথ বাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ করে পাচারকারীরা। তবে কেউ হতাহত হয়নি। গত রোববার রাতে বাহারছড়া কচ্ছপিয়া ও রাজাছড়া এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আটককৃতরা হলেন, টেকনাফ বটতলীর মো. ফিরোজের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২০), আবুল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) ও কচ্ছপিয়া এলাকার সালামত উল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ (২১)। বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান।

র‌্যাব ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, অভিযানের শুরুতে ১৪ ও পরে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযানের সময় একাধিকবার যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাচারকারীরা গুলি ছোড়ে। পাহাড় থেকে জিম্মিদের ফেলে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। সতর্কতার সঙ্গে যৌথ বাহিনী পাল্টা গুলি না চালিয়ে কৌশলে পাহাড় ঘিরে রাখে এবং ১২ ঘণ্টার চিরুনি অভিযানে ৩ জন পাচারকারীকে আটক করে। উদ্ধার করা হয় একটি ওয়ান শুটার গান, একনলা বন্দুক, একটি বিদেশি পিস্তল, দেশীয় রামদা ও গুলি। বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড় থেকে ৫৭ জন এবং বড়ইতলি এলাকা থেকে আরও ৪ জনসহ মোট ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে তারা। গতকাল সোমবার এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পাচারকারীরা মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মানুষদের অপহরণ করে পাহাড়ি আস্তানায় আটকে রেখেছিল। অভিযানের আগে আটককৃতদের জবানবন্দি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। আটক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। র‌্যাব১৫ অধিনায়ক আশিকুর রহমান জানান, মাদক ও মানব পাচার বন্ধে বিজিবি ও র‌্যাব সবসময় প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মুঠোফোনে বিয়ের পর সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা : অভিযানে উদ্ধার হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয় টেকনাফ ২ বিজিবির সদর দপ্তরে। মেহেদি দিয়ে নকশা আঁকা তার হাতে। তিনি জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় থাকা এক রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে মুঠোফোনে তার বিয়ে হয়েছে। এরপর ‘স্বামী’ তাকে সাগরপথে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার জন্য কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাকে গহীন পাহাড়ের আস্তানাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তরুণী আরও বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর তার স্বামীর কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

বেড়াতে এসে পাচারকারীদের খপ্পরে মুন্সিগঞ্জের দুই যুবক : অমিত হাসান ও মানিক মিয়া। দুই তরুণের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরে। মুন্সিগঞ্জেই তাদের পরিচয় হয় কক্সবাজারের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তারই আমন্ত্রণে দুজন কক্সবাজারে বেড়াতে যান। সেখানে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে টেকনাফে বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে অমিত ও মানিককে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন কক্সবাজারের ওই বাসিন্দা। এরপর পাচারকারীরা সাগরপথে থাইল্যান্ডে পাচারের জন্য দুজনকে টেকনাফের গহীন পাহাড়ের ভেতরের একটি আস্তানায় আটকে রাখেন। ২০ দিন পর র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে তারা উদ্ধার হয়েছেন।

বাহারছড়া কচ্ছপিয়ার গহীন পাহাড় থেকে গত রোববার উদ্ধার করা হয় অমিত হাসান ও মানিক মিয়াকে। কেবল এই দুজন নয়, পাহাড়ের ওই আস্তানা থেকে নারীশিশুসহ আরও ৮২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এ পর্যন্ত টেকনাফে ৬৫ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১৬১ জনকে। শীত মৌসুমে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার গুণ স্টোর রেন্ট আরো এক মাসের জন্য স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা