পাকিস্তান-ভারত পরমাণু যুদ্ধের পূর্বাভাস : আলোচনায় ৬ বছর আগের সেই প্রতিবেদন

| বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে ভারতের হামলা এবং পাল্টা জবাবের উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিবিসি বাংলার বছর ছয়েক আগের এক প্রতিবেদন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণার তথ্যে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে ২০২৫ সালে পরমাণু যুদ্ধ লেগে যাওয়া ও প্রাণহানির পূর্বাভাস রয়েছে সেই প্রতিবেদনে।

কাকতালীয়ভাবে ২০২৫ সালে এসেই যুদ্ধাবস্থার মুখোমুখি দুই দেশ। ভারত গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ‘শান্ত’ এ উপমহাদেশে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি ক্রমান্বয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে গড়ালে শেষ পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা নিয়েই আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন অবস্থার মধ্যে ‘পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ ২০২৫ সালে, সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি: যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা’ শিরোনামে বিবিসি বাংলার পুরনো প্রতিবেদন শেয়ার করে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, পূর্বাভাস তাহলে বাস্তবে ঘটতে চলেছে কিনা। খবর বিডিনিউজের।

মিজানুর রহমান খানের করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর। সেখানে বলা হয়, ভারতপাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতে পারে ২০২৫ সালে, যার সূত্রপাত হবে কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে। যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। গবেষকদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরাসরি প্রাণহানি ছাড়াও পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তাতে অনাহারে মারা যাবে আরও ‘বহু কোটি’ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

গবেষণার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে তাদের আশঙ্কা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এই যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে ভারতপাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার আভাস দেওয়া হয়েছিল ছয় বছর আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তখন বলেছিল, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধতে পারে ২০২৫ সালে। কিন্তু এই সময়টা গবেষকরা কীভাবে নির্ধারণ করলেন, সেই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রোবোক বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ থেকে তারা শুধু একটি বছরকে বেছে নিয়েছেন। এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সেকারণে আমরা কিছু দৃশ্যকল্প ব্যবহার করেছি কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।

পরমাণু যুদ্ধ শুধু ভারত ও পাকিস্তান নয়, ভারতচীন অথবা যুক্তরাষ্ট্ররাশিয়ার মধ্যেও হতে পারে বলে ধারণা দেন গবেষক অ্যালান রোবোক। তার কথায়, তবে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছি, কারণ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ দুটো দেশের মধ্যে অব্যাহত বিরোধ চলছেই। সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর অতীত ইতিহাসও তাদের রয়েছে।

গবেষক অ্যালান রোবোক বলেছিলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমি বলতে পারব না। পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্বের অর্থ হচ্ছে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আমরা যদি এসব ব্যবহার না করি, এগুলো ব্যবহারের যদি যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকে, তাহলে এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি চুক্তি সই হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ৫০টি দেশ অনুমোদন করলেই এটি কার্যকর হবে। তাই এখন বাকি বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলজ্জার বললেন ট্রাম্প, উদ্বিগ্ন গুতেরেস
পরবর্তী নিবন্ধভারত যেভাবে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে, তা ঠিক নয় : খলিলুর