পাকিস্তানে ক্ষমতা বাড়ল সেনা প্রধানের, কমল সুপ্রিম কোর্টের

নতুন বিলে প্রেসিডেন্টের সই

| শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বুধবার বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন হওয়ার পরদিন সেটি সই করে আইনে পরিণত করেছেন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। জারদারির সই করা বিলের একটি কপি পেয়েছে পাকিস্তানের পত্রিকা দ্য ডন। খবর বিডিনিউজের।

তাতে বলা হয়েছে, ৫ প্যারার সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলে সম্মতি দেওয়া হল। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে সেনা প্রধানের ক্ষমতা আরও বাড়ল। আর সীমিত হল সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা। সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হল। নতুন বিলটি নিয়ে বিরোধীদের ব্যাপক প্রতিবাদহট্টগোলের মধ্যেই এটি পার্লামেন্টে পাস হয়। দ্য ডন জানায়, বিলটি প্রাথমিকভাবে গত সোমবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে তোলা হয়েছিল। সেদিনই সিনেটে বিলটি পাস হয়ে যায়। এরপর বিলটি পাঠানো হয়েছিল নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে। সেখানে বুধবার পাস হয় এই বিল। তারপর বিলের সর্বশেষ পরিবর্তনগুলো বিচারবিবেচনা করে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার সেটি আবার পাঠানো হয় সিনেটে। সেখানেই বিরোধীদের তুমুল হট্টগোলের মধ্যেও দুইতৃতীয়ায়শ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিলটি পাস হয়। বিলের পক্ষে পড়ে ৬৪ ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ৪ টি। এরপর বৃহস্পতিবারেই প্রেসিডেন্ট বিলটিতে সই করলেন। সাধারণত এ ধরনের সাংবিধানিক সংশোধনীর জন্য কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী আলোচনা করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাড়াহুড়া করে বিলটি পাস করে আইনে পরিণত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই সংবিধানিক সংশোধনীর ফলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পাচ্ছেন। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমানবাহিনীরও প্রধান হবেন তিনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার পদমর্যাদা বহাল থাকবে। তিনি আজীবন কোনও অপরাধ বা অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনগত দিক থেকে দায়মুক্তি পাবেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই সংশোধনীর প্রশংসা করে বলেছেন, এটি প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ও জাতীয় ঐক্যের পথে এগিয়ে যাওয়ারই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, আজ আমরা একে সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে কেবল ফিল্ড মার্শাল নয়, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্পিকারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, এতে সমস্যার কী আছে? জাতি তার বীরদের সম্মান করেআমরা জানি, কীভাবে আমাদের বীরদেরকে সম্মান দেখাতে হয়। সমালোচকেরা বলছেন, সংবিধানিক এই সংশোধনী ক্ষমতাসীন জোট ও সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত করবে। নতুন সংশোধনীর ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। কারণ নতুন আইনানুযায়ী, সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে নতুন কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালতে চলে যাবে। নতুন এই আদালতের বিচারক নিয়োগ দেবে সরকার। সমপ্রতি কয়েকবছরে সুপ্রিম কোর্ট সরকারের অনেক নীতিমালা আটকে দিয়েছে। কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকেও পদচ্যুত করেছে। নতুন আইনে সুপ্রিম কোর্টের সেই ক্ষমতা খর্ব হবে। পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিকইনসাফের (পিটিআই) এমপি’রা নতুন বিল নিয়ে ভোটাভুটির আগে পার্লামেন্ট থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে শত শত অভিবাসীকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধপাকিস্তানকে আইসিসির শাস্তি