পাকিস্তান নারী দলকে টি–টোয়েন্টি সিরিজে হারানোর পর বাংলাদেশ নারী দলের বড় প্রত্যাশা ছিল ওয়ানডে সিরিজ জেতা। কিন্তু সে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে নিগার সুলতানারা। তবে সুপার ওভারের নাটকীয়তায় দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল স্বাগতিক নারী দল। তাই গতকালের শেষ ম্যাচটি ছিল অনেকটা অলিখিত এক ফাইনাল। আর সে ফাইনালে পাকিস্তান নারী দলকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। ব্যাটে এবং বলে দুর্দান্ত খেলেছে টাইগ্রেসরা। বিশেষ করে বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের উপর দাঁড়িয়ে দারুণ পারফম করেছে ব্যাটাররা। আর তাতেই অসাধারণ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ নারী দল। পাকিস্তানকে ১৬৬ রানে বেধে ফেলার পর ৭ উইকেট এবং ২৬ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৫ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচটাই করে সুপার ওভারে জয় পায় তারা। আর এই জয়ে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল তিন ম্যাচের সিরিজ। ২০১৪ সালে দুই ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের সিরিজটি জিতে আইসিসি উইমেন‘স চ্যাম্পিয়নশিপে এক ধাপ উপরে উঠল বাংলাদেশ দল। ১২ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান সাতে। ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে পাকিস্তান।
বাংলাদেশ দলের এই গৌরবময় জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছে দুই ওপেনার ফারজানা ও মুর্শিদার ১২৫ রানের জুটি । যা ওয়ানডেতে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। এতদিন রেকর্ডটি ছিল ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শারমিন আক্তার ও আয়েশা রহমানের ১১৩ রান। সব মিলিয়ে এই সংস্করণে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে রুমানা আহমেদ এবং শারমিন আক্তারের ১২৭ রান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানেরও শুরুটা বেশ ভালো ছিল। বাংলাদেশের ফিল্ডিং ব্যর্থতায় উদ্বোধনী জুটিতে ৬৫ রান যোগ করেন সাদাফ শামস ও সিদরা আমিন। বিশ তম ওভারে ৩১ রান করা সাদাফকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাহিদা আক্তার। সিদরা দুইবার জীবন পেয়ে খেলেন ৮৪ রানের ইনিংস। ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১৪৩ বলে ৩ চারের সাহায্যে ৮৪ রানের ইনিংসটি খেলেন এই ব্যাটার। ৮ রানে তাকে প্রথম জীবন দেন স্বর্ণা আক্তার। ৩২ রানে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ ছাড়েন মারুফা আক্তার। পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটার ১৫ রানও করতে পারেনি। একারণেই বড় হয়নি তাদের সংগ্রহ। থামতে হয় ১৬৬ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন নাহিদা। রাবেয়া খান নিয়েছেন ২টি উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ফারজানা হক এবং মুরশিদা খাতুন ১২৫ রান তুলে নেন। ৬২ রান করা ফারজানাকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন নাশরা সান্ধু। তিন রান পর ফিরেন মুরশিদা খাতুনও। সিন্ধুর দ্বিতীয় শিকার হয়ে মুরশিদা ফিরেন ১০৬ বলে ৫৪ রান করে। পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগে ফাহিমা খাতুন রান আউট হয়ে গেলেও অধিনঅয়ক নিগার সুলতানা এবং সোবহানা মোসতারি মিলে ৪৫.৪ ওভারে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। দুজন অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রানের জুটি গড়েন। সোবহানা ৩০ বলে ১৯ ও নিগার ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ দলের ফারজানা হক ম্যাচ সেরা এবং নাহিদা আকতার সিরিজ সেরার পুরষ্কার লাভ করে।