পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি রীতিমত অবান্তর : চবি উপ-উপাচার্য শামীম

| সোমবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী যে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, এ বিষয়টিকে ‘অবান্তর’ বললেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। গতকাল রোববার বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভা কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তার এ মন্তব্য আসে। ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। খবর বিডিনিউজের।

অধ্যাপক শামীম বলেন, ‘যে সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, আমি মনে করি এটি রীতিমত অবান্তর। কারণ, ওই সময় তারা তাদের জীবন শঙ্কায় ছিলেন।’

অধ্যাপক শামীম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, তবে সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছিলেন, এই সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপিজামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’এর সাবেক আহ্বায়ক শামীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে টিভি টকশোতে দেখলাম, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান বক্তব্য রাখছেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হল যে– “আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাত বরণ করেছেন। এখন আপনি এর বিপরীতে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?’ তিনি বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়’।”

শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছেন, সেই তথ্য জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানানো হয়নি।’

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন’ গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক শামীম বলেন, ‘আজ পর্যন্ত শহীদের তালিকা তৈরি হয়নি। আজ পর্যন্ত রাজাকারের তালিকা তৈরি হয়নি। শুধু আমরা বক্তব্য দিয়ে জাতিকে একের পর এক বিভ্রান্ত করেছি। আর জাতিকে বিভক্ত করেছি। অনুরোধ করব সবাইকে এই অপপ্রচার থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দেন। জাতিকে একটি সঠিক দিশা দেন।’

উপউপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই জানি যে, কোনো একটি গোষ্ঠীর ওপর দায় চাপানো হয়। কোনো ব্যক্তির ওপর দায় চাপানো হয়। পরে ১৫ বছর থেকে ২০ বছর পর দেখি যে আসলে প্রকৃত আসামি আরেকজন। এই বিষয়গুলো কেন হচ্ছে? একের পর এক ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। একটি জাতিকে পদাবনত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।’

বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ : অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্য ‘প্রত্যাখ্যান করে’ এদিন রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবমির কথা বলে নেমে ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট
পরবর্তী নিবন্ধদুজন গ্রেপ্তার, দুটি টিপ ছোরা ও বাইক জব্দ