ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আবারও পাওনা টাকা আত্মসাৎ করে এক ব্যবসায়ীর উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এজাজ মার্কেটের মরিয়ম ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ৪১ ব্যবসায়ীর ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮২ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। গত সোমবার থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে।
জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়ার সোনাইমুড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মূলত মসলার ব্যবসা করতেন। বাকিতে মসলা কিনে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ না করে তিনি উধাও হয়ে যানন বলে অভিযোগ। গতকাল পর্যন্ত তার কাছে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা পাওনার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও প্রকৃতপক্ষে সেটির পরিমাণ ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বুধবার (আজ) পরিদর্শনে যাবে পুলিশ।
জানা গেছে, মাসুদ আলমের কাছে এজাজ মার্কেটের মেসার্স গুলিস্থান ট্রেডিংয়ের পাওনা রয়েছে ৫৬ হাজার ৯৯ লাখ ৭১৫ টাকা, মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স এন আর ট্রেডার্সের পাওনা ২৪ লাখ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স এইচ. এইচ এন্টারপ্রাইজের পাওনা ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মেসার্স রামপুর সিন্ডিকেটের পাওনা ২০ লাখ ৭২ হাজার ২০০ টাকা, এজাজ মার্কেটের মেসার্স এস এম এন্টারপ্রাইজের পাওনা ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩১৬ টাকা, মেসার্স আজিজিয়া ট্রেডার্সের পাওনা ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, আসাদগঞ্জের ওসমানিয়া লেইনের মেসার্স নাজমা ট্রেডিংয়ের পাওনা ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৫ টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের মেসার্স আরাফাত ট্রেডিংয়ের পাওনা ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫০ টাকা, খাতুনগঞ্জের আহমদিয়া মার্কেটের মেসার্স এ কে ট্রেডিংয়ের পাওনা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭২ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স হক ট্রেডিংয়ের পাওনা ৬ লাখ ১০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স কামাল স্টোরের পাওনা ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের ইলিয়াস মার্কেটের মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজের পাওনা ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের গ্লোবাল প্রাইম এজেন্সির পাওনা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৮ টাকা, শাহ ফতেহ আলী বাণিজ্যালয়ের পাওনা ৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৩২ টাকা, মেসার্স যুথিকা ট্রেডার্সের পাওনা ৪ লাখ ৩৩ হাজার ১২ টাকা, ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস যীশু’র পাওনা ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের বি.পি এন্টারপ্রাইজের পাওনা ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, খাতুনগঞ্জের হাজী মার্কেটের মেসার্স আব্দুল হাকিম সওদাগরের পাওনা ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৭ টাকা, মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স লিজা ফুড প্রোডাক্টের পাওনা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের জাহেদ এন্ড ব্রাদার্সের পাওনা ৩ লাখ ১ হাজার ৫৩৫ টাকা। এছাড়া ২৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার কাছাকাছি পর্যন্ত আরো অনেক পাওনাদার রয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্বাসই খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথাই চলে আসছিল। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা চেকের বিনিময়ে বাকিতে দৈনিক ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে এই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। গত তিন দশকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অন্তত শতাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শুরুটা হয় ১৯৮৬ সালে। সর্বশেষ সংযোজন হলো মরিয়ম ট্রেডার্স। এর আগে গত জুনে এলাচ বিক্রির অর্ধশত কোটির বেশি টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা হয়ে যান খাতুনগঞ্জের সোনামিয়া মার্কেটের নুর ট্রেডিংয়ের মো. নাজিম উদ্দিন। এভাবে একের পর এক ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে উধাও হয়ে যাওয়ার প্রবণতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জের এজাজ মার্কেটের মরিয়ম ট্রেডার্সের মাসুদ আলম নামে যে ব্যবসায়ী উধাও হয়ে গেছেন, তার কাছে আমার প্রতিষ্ঠান রামপুর সিন্ডিকেটেরও পাওনা রয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আমাদের সমিতির নেতাদের শরাণাপন্ন হয়েছেন। আমরা তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৪১ জন ব্যবসায়ীর পাওনা সংক্রান্ত কাগজসহ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা হিসেব করে দেখেছি, মাসুদ আলম এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮২ টাকা আত্মসাত করেছেন। এর বাইরে আরো অনেকে মৌখিকভাবে টাকা পাওয়ার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা ওইসব ব্যবসায়ীদের পাওনা সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার কথা বলেছি। আমাদের ধারণা–মাসুদ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ৪ থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত আত্মসাত করেছেন। আগামী দুই একদিনের মধ্যে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবো। এ ঘটনায় আমরা কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী আরো সংস্থাকেও অভিযোগ দেয়া হচ্ছে।