পাওনা টাকা চাওয়ায় হত্যা লাশ গুমের চেষ্টা

বিকাশ এজেন্ট খুনের রহস্য উদঘাটন ১০ দিনেই

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে বিজয় কুমার বিশ্বাস (৩২) নামে এক বিকাশ এজেন্ট খুনের ১০ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন করে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় তার ব্যবসায়ী বন্ধু কর্মচারীকে নিয়ে গলায় ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে বিজয় কুমারকে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়। পরে ওই ব্যবসায়ী বন্ধু পালিয়ে গিয়ে অপহরণ নাটক সাজায়।
খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইপিজেড থানার সেইলার্স কলোনি থেকে গত শুক্রবার রাতে আব্দুর রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত। নগরীর ইপিজেড থানার নেভি ওয়েলফেয়ার মার্কেটে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। একই মার্কেটের নিচতলায় ছিল বিকাশ এজেন্ট বিজয় কুমার বিশ্বাসের (৩২) দোকান। গত ১৫ অক্টোবর নগরীর পাহাড়তলী থানার আলিফ গলি থেকে ককশিট ও পেপার দিয়ে মোড়ানো বস্তাবন্দি অবস্থায় বিজয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন থেকে তিনি নিখোঁজ জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ইপিজেড থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সিআইডি বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। এরপর নেভি সেইলার্স কলোনির ২ নম্বর গেট সংলগ্ন রঙধনু স্কুল গলির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
নেভি ওয়েলফেয়ার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মেসার্স রাইড এন্টারপ্রাইজ ও হাওলাদার বিল্ডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে একটি অফিস আছে রহমানের। একই মার্কেটের নিচতলায় চাঁদনী এন্টারপ্রাইজ ও এন্ড গিফট শপ নামে দোকান রয়েছে বিজয়ের।
সিআইডি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, একই মার্কেটের দোকান হওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এজন্য প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা লাভে দেড় লাখ টাকা আব্দুর রহমানকে ঋণ দেয় বিজয়। কিন্তু রহমান টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন দেখা দেয়।
সিআইডি জানায়, ১৪ অক্টোবর রহমান টাকা পরিশোধের কথা বলে বিজয়কে তার প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেয়। সেখানে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রহমান ধাক্কা দিলে বিজয় মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। তখন গলায় ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে বিজয়কে হত্যা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সেদিন বিজয়ের লাশ আব্দুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে পড়ে থাকলেও পরের দিন সকালে সে বস্তার ভেতর করে ককশিট ও পেপার মুড়িয়ে কর্মচারী নাছিরকে নিয়ে রিকশা করে বের হয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে। অলঙ্কার মোড় যাওয়ার পর আলিফ গলিতে লাশ ফেলে দিয়ে আসে আব্দুর রহমান ও তার কর্মচারী নাছির। পরে রহমান নিজেই অপহৃত হয়েছে বলে নাটক সাজায়।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর বিজয়ের বড় ভাই সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০ অক্টোবর মামলাটির তদন্তভার পায় সিআইডি। দায়িত্ব পেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে সিআইডি।
সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আব্দুর রহমান ও নাছির দুজনই পালিয়ে যান। আব্দুর রহমান নীলফামারীর সৈয়দপুরে আত্মগোপনে থেকে অপহরণ নাটক সাজায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিজের এবং নিহত বিজয়ের মোবাইল ফোন সিমসহ নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে শনাক্ত করা হয়। পলাতক কর্মচারী নাছিরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুবাইফেরত দুই যাত্রীর লাগেজে ৪০ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা
পরবর্তী নিবন্ধচারদিন পর বহির্নোঙর ও ১৬ ঘাটে পণ্য খালাস শুরু