নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন এনায়েত বাজারের কসাইপাড়া এলাকায় পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আকাশ ঘোষ (২৬) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আকাশ ঘোষ এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া এলাকার বুলু ঘোষ ও রুমা ঘোষ দম্পতির ছেলে। এই দম্পতির ঘরে আকাশসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নিহত আকাশ পেশায় একজন মোবাইল মেকানিক ছিলেন।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা আকাশ ঘোষ মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামতের পাওনা টাকা চাইতে গেলে মোহাম্মদ সানি নামের এক তরুণ তার সাথে তর্কাতর্কি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে চারজন মিলে তার সাথে ধস্তাধস্তি করতে থাকে। এরমধ্যে সানি তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। পরে পথচারী পরিচয়ে সানির আপন ভাই ইউসুফ, রিফাত ও ফারদিন নামের তিন যুবক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের রেজিস্ট্রার থেকে আনয়নকারী ফারদিনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ইউসুফের নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আকাশ ঘোষকে তিন চারজনে মিলে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসিটিভি ফুটেজে আকাশ ঘোষের সাথে তিন চারজন যুবকের কথা কাটাকাটি অতঃপর ধস্তাধস্তি ও পরিশেষে ছুরিকঘাতের দৃশ্য ধরা পড়ে। ঘটনার সময় আকাশের সাথে ইমন নামে এক ছেলে ছিল। আকাশকে ছুরিকাঘাত করার সময় সে আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যায়।
বোন পিংকি ঘোষ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছোট ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গত পূজায় তাকে আমি কাপড় কিনে দিয়েছি। ভাইয়ের কত শত স্মৃতি– এই বলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
বড় ভাই জন ঘোষ বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে ব্যবসা করতাম। আজকে থেকে আমার সব শেষ হয়ে গেল। ও ভালো মোবাইল মেকানিক ছিল। আমার বাবা ওকে বিদেশে পাঠানোর সব আয়োজন করে রেখেছিলেন। এখন সব শেষ হয়ে গেল। ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে বাবার সাথে ওর কথা হয়। পরে তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমার বাবা রাত ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে খুঁজতে খুঁজতে তাকে হাসপাতালের মর্গে খুঁজে পান।
ছেলেকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান মা রুমা ঘোষ। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার ছেলেটা আমার খুব যত্ন নিতো। আমাদের জন্য পাগল ছিল। কোনো কিছু না চাওয়ার আগে এনে দিত। এই ছেলেকে এখন ভগবান তুলে নিয়েছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
এদিকে পটিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সানি, ইউসুফ এবং ফয়সাল নামের তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা আজ (গতকাল) অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের হয়নি।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরে আলম আশেক বলেন, নিহত আকাশ ঘোষকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে কয়েকজনে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আজ (গতকাল) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।












