বর্ষা মৌসুমে বোয়ালখালীতে বাড়ে ‘পাইন্যা কচুর’ আবাদ। এখানকার কচু দেশ পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাদের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় গত এক দশক ধরে এই কচু রপ্তানি হচ্ছে ডুবাই, ওমান, সৌদি আরব, আবুধাবীসহ বিভিন্ন দেশে। উপজেলায় উৎপাদিত কচু স্বাদে–গুণে অনন্য হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারেও। তবে এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে কচুখেত নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বোয়ালখালীতে এ বছর ৩১৫ জন কৃষক ১৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করেছেন। এর মধ্যে পানি কচু ৫০ হেক্টর, যা স্থানীয়রা পাইন্যা কচু বলে সম্বোধন করে। স্থানীয় উন্নত জাতের কচু ৫২ হেক্টর, লতিরাজ ২৫ হেক্টর, বারি–১ জাতের কচু ৮ হেক্টর, বারি–২ জাতের কচু ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। কধুরখীল, সারোয়াতলী ও আমুচিয়া ইউনিয়নে কচুর ভালো ফলন হলেও পোপাদিয়া ও শ্রীপুর–খরণদ্বীপে বেশ কিছু জায়গায় কয়েক শতক জমির কচু নষ্ট হয়েছে। এতে কচুখেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। খরণদ্বীপ এলাকার কৃষক মোহাম্মদ বাচ্চু ২ একর জমিতে কচু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি ৪০ শতক জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এবার কচু ভালো ফলন হলেও প্রচণ্ড গরমের কারণে ৬০–৭০ শতক জমির কচু নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি মাঠ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেলে এ ক্ষতি রক্ষা পেত বলেও দাবি তাঁর। কৃষি মাঠ কর্মকর্তা সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষতির শঙ্কা করছেন পোপাদিয়ার কৃষক মুহাম্মদ জসিম, মুহাম্মদ শফি, শ্রীপুর–খরণদ্বীপ মুহাম্মদ সুজন। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা জমি থেকে কচু তুলে সড়কের পাশে সাজিয়ে রাখছেন বিক্রির জন্য। পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসব কচু দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় কথা হয় পাইকারী ব্যবসায়ী সাইফুদ্দীনের সাথে। তিনি জানান, বিশেষ করে বোয়ালখালী পোপাদিয়া ও শ্রীপুর–খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কচু সুস্বাদু হওয়ায় প্রতি বছর অনেক টাকা কচু বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তবে এবার কচু মান ঠিক না হওয়ায় বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কৃষকদের প্রশিক্ষণের অভাবে কচু মান নষ্ট হয়ে যায় বলেও দাবী তাঁর। পাইকারি কচু ব্যবসায়ী আবুল হাশেম জানান, খরণদ্বীপ ও পোপাদিয়া ইউনিয়ন থেকে কচু কিনে নগরের রিয়াজউদ্দীন বাজারে বিক্রি করি। সেখান থেকে ঢাকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বোয়ালখালীর কচু রপ্তানি করেন ব্যবসায়ীরা। ২০২০–২১ অর্থবছর থেকে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কচু উৎপাদনে বোয়ালখালীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ। তিনি বলেন, কচু চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হয় সহায়তা ও সার্বিক পরামর্শ। তবে সবাই একসাথে প্রণোদনা দেওয়া না গেলেও যোগাযোগ করলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরো বলেন, একেবারে ক্ষতি হয়েছে এরকম তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোথাও কোথাও ফলন একটু কম হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বোয়ালখালীতে সাধারণত মুখিকচু, পানিকচু ও লতিকচু, এই ৩ ধরনের কচু চাষ হয়ে থাকে। তবে পানিকচু (পাইন্যা কচু) বেশি জনপ্রিয়। চাষিরা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করেন। তবে যারা এঙপোর্টার ও উৎপাদনকারী কৃষক তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে ও সনদবিহীন কচু রপ্তানি করায় গুণগতমান ও রপ্তানি করতে নানা রকম সমস্যায় পড়েন।