দেশের বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েক মাস ধরে দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের মূল্য পায়, তাই সরকার পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাজারে কেবল এখন দেশি পেঁয়াজই রয়েছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজের উচ্চ ফলনের পরেও কিছু কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করছেন। কারণ এখন দেশি পেঁয়াজ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই এই সুযোগ কাজে লাগচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। গতকাল চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এদিকে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের প্রায় আড়তদার কমিশনের ভিত্তিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিকারক যে দাম নির্ধারণ করে দেন, তাই দামে বিক্রি করেন। এর বিনিময়ে কেজিপ্রতি তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। তাই আড়তদারদের পক্ষে দাম উঠানামা করার কেনো সুযোগ নেই। আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের দাম গত দুই এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। দেশি পেঁয়াজ চাষিদের সুরক্ষার জন্য সরকার আমদানি আইপি বন্ধ রেখেছেন। তাই বাজারে দেশি পেঁয়াজের বিকল্প নেই। এছাড়া সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে এটিও দাম বাড়ার আরেকটি অন্যতম কারণে।
মধ্যম চাক্তাইয়ের কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, আসলে কাঁচাপণ্যের বাজার সব সময় এক রকম থাকে না। সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যায়। বাজারে এখন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। দাম বাড়ার আরেকটি কারণ হলো– একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীর মজুদদারি। তখন কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখছে। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারে ছাড়ছে। এই কারণেও পেঁয়াজের বাজার বাড়তি।