পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ–আলু রপ্তানিতে বুকিং স্লট বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার জেরে পাইকারীতে একদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। গতকাল খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। এছাড়া আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ–আলু আমদানি হলেও গতকাল হঠাৎ করে পশ্চিমবঙ্গের সরকার নিজেদের বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে বুকিং স্লট বন্ধ করে রাখে। ফলে বিশেষ করে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। আমাদের দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদ খুব বেশি। এছাড়া আমদানিতে সময় কম লাগার কারণে আমদানিকারকরা ভারতীয় পেঁয়াজের দিকে বেশি ঝুঁকেন। অন্যদিকে ভোক্তারা বলছেন, ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়েছে মাত্র, কিন্তু এরই মধ্যে পেঁয়াজের বাজারে অরাজকতা শুরু হয়েছে। রপ্তানি বন্ধকে অজুহাত বানিয়ে পেঁয়াজে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন বিক্রেতারা। অথচ পেঁয়াজের দাম যখন কমে যায়, কিংবা ভারত থেকে সরবরাহ বেশি হয়, তখন কিন্তু পাইকারী কিংবা খুচরা বিক্রেতারা দাম কমায় না।
গতকাল চাক্তাইয়ের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। একদিন আগে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকায়। অপরদিকে পাইকারীতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬৫ টকায়। একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আড়তে ব্যবসায়ীরা কমিশনের ভিত্তিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। আমদানিকারকরা যে দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বলেন, আড়তদাররা সেই দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না। বর্তমানে পেঁয়াজের চাহিদা কমার কারণে এখন দামও কমছে। আসলে পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য, চাইলে মজুদ রাখা যায় না।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারত থেকে আজকে (গতকাল) পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তাই দাম বাড়ছে। হঠাৎ করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বর্তমানে বাজারে পাকিস্তান, তুরস্ক ও দেশী পেঁয়াজ রয়েছে। এই পেঁয়াজের সরবরাহও খুব বেশি নয়। এছাড়া আমাদের দেশে আবার ভারতীয় পেঁয়াজের কদর বেশি। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দাম উর্ধ্বমুখী। তবে পাকিস্তান, তুরস্ক ও দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়েনি।
ইমরান হোসেন নামের এক ভোক্তা জানান, পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন কিছু নয়। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেন। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দামবৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনকে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।