পাঁচ ভাইয়ের পর চলে গেলেন রক্তিমও

চকরিয়ায় পিকআপ চাপা

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

১৪ দিন ধরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রক্তিম শীলও (৩২) চলে গেছেন না ফেরার দেশে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা রক্তিম শীল গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ নিয়ে চকরিয়ার মালুম ঘাটে পিকআপ চাপায় একসঙ্গে পাঁচ ভাই নিহতের পর মারা গেলেন তাদের আরেক ভাই রক্তিমও। ৭ ভাই ২ বোনের ওই পরিবারে ভাইদের মধ্যে এখন কেবল বেঁচে আছেন সদ্য এইচএসসি পাস করা ছোটজন প্লাবন শীল। মুন্নী শীল নামের একবোন ওইদিন দুর্ঘটনার হাত থেকে প্লাবনের সঙ্গে অক্ষত অবস্থায় ফিরলেও অপর বোন হীরা শীল এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল সকাল ১১টার দিকে নিহতের স্বজন মিন্টু দত্ত দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার মাসতুতো বোন সুমনা শর্মার স্বামী রক্তিম শীল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে আমরা তার (রক্তিম) জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেই জ্ঞান আর ফেরেনি। পাঁচ ভাইয়ের পর রক্তিমও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
পরিবার সূত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে বাড়ির কাছে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কের পাশে নির্জন স্থানে প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের পারলৌকিক ক্রিয়ানুষ্ঠানের আচার হিসেবে ‘দণ্ডি’ দিয়ে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে দ্রুতগামী পিকআপ এসে সাত ভাই-বোনকে একসঙ্গে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে চার ভাই অনুপম শীল, নিরূপম শীল, চম্পক শীল, দীপক শীল মারা যায়। চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যান আরেক ভাই স্মরণ শীল। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় বোন হীরা শীল ও অপর ভাই রক্তিম শীল। তদ্মধ্যে হীরা মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে এবং রক্তিম চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রক্তিম সুশীলকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. অধ্যাপক রনজন কুমার নাথ বলেছেন, তিনি মাল্টিপল ট্রমায় ভুগছিলেন। রক্তিম শীলের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে দুইবার মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার আঘাত ছিল অনেক গুরুতর। অপারেশন করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তিনি বেঁচে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার কোনো সাড়া-শব্দ ছিল না। আর লাইফ সাপোর্টে থাকার সময় এমনিতেই কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়।
ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় ৬ পুত্র সন্তান হারানো বৃদ্ধা মা মৃণালিনী শীল বলেন, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। আমার রক্তিমও চলে গেল। আমিও হয়তো বাঁচবো না।
চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ৭ ভাইয়ের মধ্যে ৬ জনই নিহত হয়েছেন। ভাই বলতে বেঁচে আছেন একমাত্র প্লাবন শীল। একের পর এক ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনিও অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। এজন্য সমবয়সীরা তাকে এখানে-ওখানে নিয়ে গিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে প্লাবনের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাও অনিশ্চিত- বলছেন পরিবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় পুত্র হারা বৃদ্ধা মৃণালিনী বাঁচবেন কী নিয়ে?
পরবর্তী নিবন্ধনতুন শুরুর লক্ষ্য টাইগারদের