কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ভয়াবহ নৈরাজ্য–নাশকতা এবং ধ্বংসযজ্ঞের কারণে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত পাঁচদিনে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পূর্বাঞ্চল থেকে প্রতিদিনের ৫৭টি আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার এবং মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ট্রেন চলাচল কবে থেকে স্বাভাবিক হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।
গতকাল তিনি আজাদীকে বলেন, পূর্বাঞ্চলে একদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হয়। প্রতিদিন পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম–ঢাকা, চট্টগ্রাম–সিলেট, ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার, চট্টগ্রাম–চাঁদপুর, চট্টগ্রাম–ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম–জামালপুর, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার, চট্টগ্রাম–নাজিরহাট রুটের চলাচলরত আন্তঃনগর ও লোকাল ও কমিউটার ট্রেন, তেলের গাড়ি এবং মালবাহী ও খাদ্যবাহীসহ যতগুলো ট্রেন চলে সব মিলে প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় হয়। তবে ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে দেশব্যাপি নৈরাজ্য ও নাশকতার কারণে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেনি। সব ট্রেনই পথিমধ্যে আটকা ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকার মহাখালীতে বাধার মুখে পড়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মহাখালী ও নাখালপাড়া এলাকায় রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের কারণে সেদিন দুপুর ১২টার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রেল মন্ত্রণালয় ঢাকা–চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম–ঢাকা, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–চাঁদপুর, চট্টগ্রাম–ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম–জামালপুর, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার, চট্টগ্রাম–নাজিরহাট এবং ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ৫৭টি আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার এবং মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি (১০ জোড়া) শাটল ট্রেন চলাচল করে। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে প্রতিদিন ৫টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে বলে জানান চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান।