নাশকতার মামলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত এ আদেশ দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার মহাখালীতে সরকারি স্থাপনা সেতু ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় বনানী থানার মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানের বাসা থেকে পার্থের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসে। খবর বিডিনিউজের।
বিকালে আদালতে তোলা হয় পার্থকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সায়ীদ মিয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তার আসামি ঘটনা সংঘটনের অর্থের যোগানদাতা, যা নিয়ে তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও এর সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
পার্থের রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী আলী বাশার। আদালতকে তিনি বলেন, এই নাশকতায় জড়িত নন আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি এসব দল করেন না। তার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি–জামায়তের কোনো অ্যালয়েন্সও নাই। পার্থর নিজস্ব পলিটিক্যাল স্বত্তা আছে। নিজের অ্যালায়েন্স আছে। সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। গ্রেপ্তারের কোনো স্পেসিফিক অ্যালিগেশন নাই। তিনি ইয়ুথ আইকন, পপুলার। তাকে কেন তুলে আনতে হবে? রিমান্ড আবেদনে জামায়াত– বিএনপির কথা বলা হয়েছে। তিনি এই সংঘাতের কারণে কোনোভাবেই অভিযুক্ত হতে পারেন না।
শুনানির এ পর্যায়ে বিচারক সোহাগ উদ্দিন রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এর উত্তর জানতে চান। তখন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল বলেন, আমাদের রিমান্ডের ফরোওয়ার্ডিংয়ে তো কোনো পার্টির নাম নেই। আমরা তো কোনো পার্টির নাম বলিনি। নাশকতাকারীদের মধ্যে পার্থর রাজনৈতিক দল অথবা বিএনপি–জামায়াত বলে কোনো শব্দ নাই। কারও নাম নাই। কারা কারা জড়িত, তা জানতেই এই রিমান্ড আবেদন।
এ পর্যায়ে পার্থকে কথা বলার সুযোগ দেন আদালত। আদালতে তিনি বলেন, নিজের প্রশংসা তো নিজে করতে পারি না। আমরা আইনের শাসনে যারা বিশ্বাস করি, তারা এ রকম কাজ করতে পারি না। আমরা পজিটিভ পলিটিঙ করি। আজকের জেনারেশনের লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের কাছে আসছে। তবে আমি জানি সব কিছু রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। এমন কোনো আদেশ যদি দেন, তবে তারা পজিটিভ রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হবে না।
একই মামলায় বিএনপিপন্থি এক ব্যবসায়ীর রিমান্ড : একই মামলায় বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী রেজাউল হাসান ডেভিডকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন একই বিচারক। পার্থর শুনানির আগে শুনানি হয় রেজাউল হাসানাত ডেভিডের। তার পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ডেভিড একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে তিনি ১২ জুলাই থেকে দেশের বাইরে ছিলেন।
শুনানির এ পর্যায়ে আদালতকে ডেভিডের পাসপোর্ট দেখান তার আইনজীবী রেজাউল। তিনি বলেন, তাহলে ডেভিড কীভাবে নাশকতাকারীদের টাকার যোগান দেবেন? ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে বিকাশ–নগদসহ টাকা আদান–প্রদানের সব ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় ভুত–প্রেত, জিন–পরীও টাকা আদান–প্রদান করতে পারবে না।
রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চান বিচারক সোহাগ উদ্দিন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ বলে, অর্থের যোগান তিনি দিয়েছেন কিনা, দিলে তা কীভাবে, কার মাধ্যমে দিয়েছেন, সেসব জানার জন্যই রিমান্ড দরকার।
শুনানির পর জামিন আবেদন নাকচ করে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে পার্থ ও ডেভিডকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।