পাঁচ জুট মিল যাচ্ছে বেসরকারি খাতে, ৬ জানুয়ারি চুক্তি

রয়েছে রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি ও সীতাকুণ্ডের হাফিজ জুট মিলস

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কেএফডি জুট মিলস লিঃ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দরপত্র যাচাই শেষে ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কেএফডি ছাড়াও দেশের আরও চারটি জুট মিলকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার হাফিজ জুট মিলসও রয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত কেএফডি জুট মিলসের অন্তর্ভুক্ত ইউনিট রয়েছে চারটি। সেগুলো হচ্ছে, কর্ণফুলী জুট মিলস, কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি, ডেভেলপমেন্ট অব ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স ও ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স। জানা গেছে, চট্টগ্রাম জোনে আরও তিনটি জুট মিল ইজারা দেয়া হবে। সেগুলো হচ্ছে, এম এম জুট মিলস, সীতাকুণ্ডের আর আর জুট মিলস এবং কুমিরার গুল আহমেদ জুট মিলস।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন ২৬টি জুট মিল বন্ধ করে দেয় সরকার। বছরের পর বছর লোকসান না টানতেই ইজারা অথবা ভাড়ায় মিলগুলো পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর এই জুট মিলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার পর দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠান তাতে সাড়া দেয়। সেই দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচটি জুট মিল ইজারা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠান কেএফডি ও হাফিজ জুট মিলস ছাড়া দেশের বাকি তিনটি জুট মিল হচ্ছে সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস ও নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় জুট মিলস ইজারা পাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক, ক্রিসেন্ট জুট মিলস ইজারা পাচ্ছে মিমো জুট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ জুট মিলস ইজারা পাচ্ছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। তবে ইজারাদারদের এসব জুট মিল পরিচালনার জন্যে ২০টি শর্ত মানতে হবে। ইজারার টার্মস অব রেফারেন্সে (টিওআর) এসব শর্ত দিয়েছে বস্ত্র মন্ত্রণালয়। তাতে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শর্তগুলো হচ্ছে, ১. প্রতিটি মিল প্রথমবার ৫ থেকে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে। ২. ইজারা গ্রহণকারী লিজের সম্পত্তি সাব-লিজ, মর্টগেজ দিতে পারবে না। একইসঙ্গে কোনো ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবে না। ৩. চুক্তির লক্সঘন হলে সরকার তিন মাসের নোটিশে লিজ বাতিল করতে পারবে। ৪. লিজের মেয়াদে লিজ গ্রহণকারীর নাম বদলানো যাবে না। ৫. মিল হস্তান্তরের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব করা হবে। ৬. সরকার ও উদ্যোক্তা উভয়ে ছয় মাসের নোটিশে স্বাভাবিকভাবেই এই লিজ চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিতে পারবে এমন প্রায় ২০টি শর্ত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে দাউদ শিল্পগোষ্ঠী ‘দাউদ জুট মিল’ নামে এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করে। ১৯৭২ সালে এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। পরে কর্ণফুলী-ফোরাত কার্পেট ফ্যাক্টরি ও ডেভেলপমেন্ট অব ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স নামে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। এর পর ‘কর্ণফুলী-ফোরাত কার্পেট ফ্যাক্টরি’ নাম পরিবর্তন করে ‘কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি’ রাখা হয়। তিন প্রতিষ্ঠান মিলে নাম রাখা হয় ‘কেএফডি জুট মিলস’। পরে ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে লোকসানের অজুহাতে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ২০০৮ সালে বেসরকারি খাতে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়। ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলটি সরকারিভাবে চালু করেন। এ সময় গত বছর মিলটি আবারো বন্ধ হয়ে যায়।
কেএফডির প্রকল্প প্রধান নুরুল আলম ভূঞা বলেন, কেএফডি নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি লিজ দেয়া হবে বলে জেনেছি। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোনো কাগজপত্র আসেনি। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৩ সালে ৭৬.২১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই জমির মাঝ দিয়ে গোচরা খাল বয়ে গেছে। জেনেছি ওই খালের পূর্ব পাড়ে ৪০ একর জমির উপর স্থিত শুধুমাত্র প্রশাসনিক ভবন ও কারখানাগুলো লিজ দেয়া হবে। খালের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুকুর আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন। সেগুলো লিজের আওতামুক্ত থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাসভবনগুলো ভাড়া দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে কর্তৃপক্ষের। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ইজাদারের কাছে স্থানান্তর হওয়ার পর এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচরীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধদুই চাকায় বাদাবনের সমীপে