অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত নাবলুসের কাছে তুবাস শহরে শতাধিক ইসরায়েলি সেনা সাঁজোয়া যান নিয়ে নতুন এক বড় ধরনের অভিযানে নেমেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ওই অঞ্চলে এটাই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ। গতকাল বুধবার সেনারা শহরটিতে অবস্থান নেয় এবং কিছু ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
তুবাসের গভর্নর আহমেদ আল আসাদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়েছে। শহরজুড়ে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়েছে এবং কয়েকটি জায়গায় সেনারা অবস্থান নিয়েছে। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার রাতে তুবাস এবং পাশ্ববর্তী কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। সড়ক বন্ধ করা হয়, বহু পরিবারকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয় যাতে ইসরায়েলি বাহিনী ওইসব ভবনকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘বস্তৃত পরিসরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ শুরু করেছে, যা কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, তুবাসে সেনারা লিফলেট বিতরণ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, এলাকায় সন্ত্রাসবাদীরা আশ্রয় নিয়েছে। লিফলেটে সতর্ক করা হয়েছে, আপনি যদি পরিবর্তন না আনেন, আমরা জেনিন ও তুলকারেমের মতো ব্যবস্থা নেব। বছরের শুরুতে উত্তরাঞ্চলের এ দুটি শহরে বড় সামরিক হামলা চালিয়োছিল ইসরায়েল। এতে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। খবর বিডিনিউজের।
গাজায় গত রাতেও সহিংসতার খবর এসেছে, বিশেষ করে আল–বুরেইজ শহরের কাছে বোমাবর্ষণ হয়েছে। ইসরায়েলের সেনারা জানিয়েছে, তারা রাফার কাছে এক সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়া ছয় জন হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা জানায়, স্বাধীনভাবে এই তথ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তবে সামপ্রতিক দিনগুলোতে গাজার উত্তরে ইসরায়েল–নিয়ন্ত্রিত অংশে সুড়ঙ্গের ভেতর আটকে থাকা হামাস সদস্যের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার হামাস তাদের হাতে থাকা ইসরায়েলি এক জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এছাড়া, গাজায় এখনও আরও দুই বন্দির মরদেহ রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি, আরেকজন থাই নাগরিক।
এদিকে, পশ্চিম তীর ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলে। সেখানে সহিংসতা ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর আরও বেড়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘ জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ ঘটনায় ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্বিচারে হামলা’ ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। অন্যদিকে, একই সময় ফিলিস্তিনিদের হামলায় অন্তত ৪৪ ইসরায়েলি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এই সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে যেভাবে মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাত করা হয়েছে, তা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। সংস্থাটি বলছে, বাস্তুচ্যুত ৩২ হাজার মানুষ এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি; ইসরায়েলি বাহিনী বহু ঘরবাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।












