রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থানটা কল্পনা করলে দেখা যায় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে পশ্চিমারা তাকে একঘরে করে রেখেছে। রাশিয়ার অর্থনীতিকে বিশ্ব বাজার থেকে বিচ্যুত করা লক্ষ্য নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। তার ওপর আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও পুতিনের মাথার ওপর ঝুলে আছে।
কিন্তু এতসব চাপ যে কাজে আসছে না তা–ই বিশ্বকে দেখাতে চান পুতিন। আর সেকথা মাথায় রেখেই তিনি আয়োজন করেছেন সম্মেলন। যে সম্মেলনে অংশ নিতে জড়ো হবেন উদীয়মান অর্থনীতির ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। রাশিয়ার কাজান শহরে এ সপ্তাহে (২২–২৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে এই ব্রিক্স সম্মেলন। এতে যেসব দেশের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও। খবর বিডিনিউজের।
ক্রেমলিন এই সম্মেলনকে রাশিয়ায় পররাষ্ট্রনীতির এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান আখ্যা দিয়েছে। কনসালটেন্সি ফার্ম ম্যাক্রো–অ্যাডভাইজোরির সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস ওয়েফার মনে করেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে রাশিয়া এই স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রেমলিন থেকে দেওয়া বার্তার মূল বক্তব্যটাই হল–রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা উৎরে যাচ্ছে। আমরা জানি উপরিভাগের নিচে মারাত্মক ফাটল আছে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক পর্যায়ে রাশিয়ার এই সব বন্ধু দেশ আছে। আর তারা সবাই রাশিয়ার অংশীদার হতে চলেছে। ব্রিক্স পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ–ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার, আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক অর্থনীতির একটি জোট। দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি বড় মঞ্চ এই ব্রিকস সম্মেলন। পারস্পরিক কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বিশ্ব পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এ মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা–নেতৃত্বাধীন বিশ্বের পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে প্রায়ই ব্রিকসের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে আরও কয়েকটি দেশ যোগ দিয়েছে। এগুলো হল মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবকেও ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, আরও ৩০টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায় কিংবা এই জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়। এই দেশগুলোর কয়েকটি সম্মেলনে যোগ দেবে। বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রণালয়ের বিপুল ক্ষমতা এবং প্রভাব রয়েছে। কারণ, এই বাণিজ্যে মূল মুদ্রাই হচ্ছে মার্কিন ডলার। রাশিয়া চায় ডলারের এই আধিপত্য ভেঙে দিতে। তারা চায় ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো একটি বিকল্প বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলুক যেটাতে ডলার দরকার হবে না, বরং ইউরো কিংবা জি–৭ জোটের মুদ্রা দিয়েই কাজ চলবে। সেরকম হলে রাশিয়ার ওপর আরাপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আর বেশি মাথাব্যথার কারণ হবে না।