পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় ২০ নির্দেশনা

বাস্তবায়ন করতে হবে চসিক, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও সিএমপিকে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর হাট, পশু জবাই ও জবাইকৃত পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্তগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, মেট্রোপালিটন ও জেলা পুুলিশকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সূত্রে জানা গেছে, নগরে ছয়টি কোরবানি পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছে। বাকি তিনটিতে ইজারাদার নিয়োগে গত সপ্তাহে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেখানে। যেমন প্রতিটি বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা আলাদা পথ থাকতে হবে। সে আলোকেই সবকিছু করব। আমাদের প্রস্তুতি আছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানির জন্য সম্ভাব্য চাহিদা আছে আট লক্ষ নয় হাজার পশুর। বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে সাত লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। এরমধ্যে গবাদিপশু ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ ৬৩ হাজার ১৩৬ টি, ছাগল ও ভেড়া এক লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৩টি এবং অন্যান্য ৯৫ টি। স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা গরু যোগ হবে। ফলে চট্টগ্রামে গরুর সংকট হবে না।
২০ নির্দেশনা : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানি পশুর হাট, পশু জবাই ও জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তুতি পর্যালোচনায় গত ১৩ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো রেজুলেশন আকারে গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ২০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চসিকসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে ১০ টি সিদ্ধান্ত পশুর হাট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত।
সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- সড়ক-মহাসড়কের ওপর বা সন্নিকটে কোনো ক্রমেই পশুর হাট বসানো যাবে না। এক্ষেত্রে কেউ আইন অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পশুর হাট ব্যবস্থাপনা এবং পশু কোরবানিকালীন স্বাস্থ্য বিভাগ প্রণীত গাইডলাইন যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে।
নগরের পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার একমুখী চলাচল নিশ্চিত করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। এক্ষেত্রে প্রবেশপথ এবং বর্হিগমনের পথ পৃথক করতে হবে। পাশাপাশি সকলে যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের জন্য হাটের প্রবেশ মুখে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র এবং হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত বেসিন, পানি এবং জীবাণুনাশক সাবান রাখতে হবে।
একইভাবে পশুর হাটে প্রবেশকারী সকলকে সামাজিক দূরত্ব অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ানো, ভেতরে সারিবদ্ধভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রবেশ ও বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভিড় এড়াতে কোরবানির দুয়েকদিন আগে পশু ক্রয়ের পরিবর্তে সময় হাতে রেখে পশু ক্রয়ে উৎসাহ এবং বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে পশুর হাট আয়োজনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহ দিতে হবে।
সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে পশুর হাট আয়োজন ও পশু কোরবানি যথাযথভাবে সম্পন্নকরণের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য টিভিসি প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের প্রচারবোর্ডেও প্রচার চালাতে হবে। কোরবানির অন্তত ১৫ দিন আগে সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করতে হবে।
জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগকে কোভিড-১৯ এর ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সকল স্থানে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু বিক্রি এবং জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একইসঙ্গে পশুর হাটে নগদ টাকার লেনদেন হওয়ায় হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে হাটে আনা পশুর সুস্থতা নিশ্চিতে ভেটেনারি চিকিৎসক অথবা সার্জনের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
জবাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : নগরে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি পশু জবাই নিশ্চিত করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পশু জবাইয়ের স্থান, ইমাম ও কসাইয়ের তালিকা করে প্রচারণা চালাতে হবে। এছাড়া পশু জবাইয়ের স্থান স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। পাশাপাশি বর্ষাকাল বিবেচনায় সেখানে সামিয়ানা বা ত্রিপল টাঙ্গানোসহ বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া নগরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জবাইকৃত পশুর নির্দিষ্ট করে দেয়া স্থান দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। ছিটাতে হবে ব্লিচিং পাউডার। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়ির আঙ্গিনায় পশু কোরবানি করলে নাগরিকদের দ্রুত পরিষ্কার করা এবং ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ অথবা ২২ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পবিত্র কোরবানির পশুর হাট বসে নগরে। ওই হিসেবে এবার আগামী ১২ অথবা ১৩ জুলাই থেকে পশুর হাট শুরু হওয়ার কথা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই পক্ষের সংঘর্ষে মরিচের গুঁড়া, গরম পানি
পরবর্তী নিবন্ধমডার্নার ১৩ লাখ ডোজ টিকা এলো দেশে