পশুর বর্জ্য ফেলতে দেয়া হবে এক লাখ পলিব্যাগ

কোরবানির দিন ৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন করা হবে নগরী চসিকের সাধারণ সভায় নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে নগরে এক লাখ পলিব্যাগ সরবরাহ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কেরবানিদাতারা ওসব ব্যাগে পশুর উচ্ছিষ্ট ফেলবেন। পরে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসে তা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন। গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ১৭তম সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় দুর্ঘটনারোধে নগরের বিভিন্ন খালের পাড়ে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং খালে ময়লা-আবর্জনা ফেললে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোরবানির দিন নগরীকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানি পরবর্তী তিন দিন যাতে উপজেলা থেকে জবাইকৃত পশুর চামড়া নগরে প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে চামড়া ব্যবসায়ী, লবণ ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সাথে যৌথ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান করে উপজেলা পর্যায়ে চামড়া লবণজাত করে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নেয়া হবে।

তিনি বলেন, নগরবাসী পশুর বর্জ্য নিদিষ্ট জায়গায় রাখার সুবিধার্থে এক লাখ পলি ব্যাগ সরবরাহ করা হবে। আমরা চাই বিগত বছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে চসিক সারা দেশে যে সুনাম অর্জন করেছে তা থেকে যেন আরো উত্তরণ করা যায় সে প্রচাষ্টা চালানো হবে।

তিনি বলেন, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার যে সংস্কৃতি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তা দূরীকরণে কঠোর হতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক প্রণীত ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১’ এর মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চসিক বাধ্য হবে। এ জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং এর মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপরও যদি বিষয়টি কেউ অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জরিমানাসহ দণ্ড বিধান যা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের জেল বা উভয় দণ্ড প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই।

মেয়র বলেন, নগরে জলজটের কারণে রাস্তা ও নালা একাকার হয়ে পূর্বে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ যে অন্য যে কোনো সেবা সংস্থাই কাজ করুক না কেন সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণের দায়িত্ব চসিক প্রকৌশল বিভাগকে নিতে হবে। ভবিষ্যতে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন মেয়র।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প মেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের যে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে তার আওতায় নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের নালা নর্দমার মাটি উত্তোলন, পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য পুরোদমে কাজ অব্যাহত রয়েছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ নগরীর ১৮টি ওয়ার্ডে একযোগে চসিকের বিশেষ দলের মাধ্যমে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলেছে।

তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০৪১ এর সাথে মিল রেখে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন এলাকায় মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যানে চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে এস টিএস (সেক্টন্ডারি টান্সফার স্টেশন) ও টিজি স্থাপনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মেয়র বলেন, নগরীতে ইমারত বা টাওয়ার নির্মাণ করতে গেলে যে প্লান অনুমোদন দেয়া হবে তাতে সিটি কর্পোরেশন থেকে ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। তা না হলে নগরীর জলাবদ্ধতা সহ অন্যান্য যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তা নিরসন সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, সিলেটের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো নিমিত্তে চসিকের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের একদিনের সম্মানি বন্যাদুর্গতদের জন্য আর্থিক সাহায্যাকারে ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রণালয়ে প্রদানের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চসিকের একটি মেডিকেল টিম প্রেরণ করা হবে।
মেয়র নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে অপরিকল্পিতভাবে যাদের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাতে সৌন্দর্যবর্ধনের চাইতে সৌন্দর্যহানি হয়েছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায় চুক্তি বাতিল করা হয়েছে এবং আরও বাতিল করা হবে বলে জানান। মেয়র সৌন্দর্যবর্ধনের যে সমস্ত ফেন্সিং করা হয়েছে তা পুনরায় সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন করার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দেন এবং মিড আইল্যান্ডে সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী নির্দিষ্ট প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ এবং রোপিত গাছগুলোকে সঠিক পরিচর্যা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন।

মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৬টি খাতের উপর কর আদায়ের নীতিমালা থাকলেও চসিকের এ পর্যন্ত কয়েকটি খাত ছাড়া বাকি খাতগুলো থেকে করের আওতায় আনতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা খতিয়ে দেখে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন মেয়র। এছাড়া টাইগারপাস চত্ত্বরটি পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী নামে নামকরণের বিষয়টি সাধারণ সভায় অনুমোদন লাভ করায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পত্র প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

চসিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী, পানি ও বিদ্যুৎ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মোর্শেদ আলম, অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইসমাইল, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। সভার শুরুতে সিলেট সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা এবং শীতাকুণ্ডে বি এম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়। এছাড়াও নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মোনাজাত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসকালের শাটলে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা বহিরাগত আটক
পরবর্তী নিবন্ধআটক বিল ছাড়ে হিসাবরক্ষকের জালিয়াতি, তারপর যা হলো