পলোগ্রাউন্ডের আকাশে শতাধিক ঘুড়ি

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা, তাই উৎসব

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

‘৪ ডিসেম্বর বিকেলবেলা, পলোগ্রাউন্ডে জমবে মেলা/ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়, চাটগাঁবাসী আয় ছুটে আয়।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে চট্টগ্রামজুড়ে। গতকাল পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত ঘুড়ি উৎসবের ব্যানারে লেখা ছিল উল্লেখিত ছড়াটি।
বর্তমানে প্রতিটি জায়গায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কারা বেশি জমায়েত দেবে, এখন থেকেই চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশে অংশ নিতে পুরো বিভাগ থেকে ১০ লাখ মানুষ সমবেত হবেন। নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রতিটি সড়ক ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের নামে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। কোথাও সড়কের আইল্যান্ডে শোভা পাচ্ছে বিশাল নৌকা। কোথাও বের করা হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। তাছাড়া মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, ট্রাকে প্রচারণা চালানো, ঢোলের বাদ্য, দেশাত্মবোধক গান, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে গুণকীর্তন, শত শত তোড়ন, ঘুড়ি উৎসব-কী চলছে না?
২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ বছর পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে
সামনে রেখে জেলায় জেলায় সফরের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে ও নির্বাচনমুখী প্রচারণায় নামাতেই এই উদ্যোগ।
রং তুলির আঁচড়ে বিবর্ণতা দূর করে নবরূপ পেতে চলেছে নগরী। স্থাপত্যে জমে থাকা ময়লা ও দাগ পরিষ্কার করতে কাজ করছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবা সংস্থা। ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। ফুটপাত, সড়কদ্বীপ, ফ্লাইওভারে পড়ছে রঙের ছোঁয়া। প্রধানমন্ত্রীর আগমন আনন্দঘন করতে নগরীর রাস্তাঘাট ও স্থাপত্যগুলোকে প্রাণ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের মাঝের অংশটির ল্যাম্পপোস্টে ৭০-এর নির্বাচনে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার আকৃতিতে এলইডি বাতি লাগিয়ে আলোকসজ্জা করেছে চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ। এরই মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ চট্টগ্রামে থাকবেন নগরী লোডশেডিংমুক্ত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন বার্তা জানান দিতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করছেন। পাশাপাশি তারা পথসভা করছেন।
৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নের নতুন সূর্য উদিত হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে উৎসব মুখর করতে গতকাল বিকাল ৩টায় পলোগ্রাউন্ড মাঠে নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে উপরোক্ত মত প্রকাশ করেন তিনি।
ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে সাবেক চসিক প্রশাসক সুজন বলেন, ঘুড়ি উৎসব চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন খেলা, যা নগরায়নের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছিল। আজ সে ঘুড়ি উৎসবের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রামের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং দেশকে যেকোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করতে চট্টগ্রামের জনগণ সর্বদা প্রধানমন্ত্রীর পাশে আছেন। দেশের যেকোনো আন্দোলন, সংগ্রাম চট্টগ্রাম থেকেই সূচিত হয়েছে। ঠিক তেমনি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে অবস্থান সেই অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করতে চট্টগ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রীর সাথে থেকে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে-সেটা জানান দিতেই আজকের ঘুড়ি উৎসব।
নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখান না, উনি বাস্তবে রূপ দান করেন। চট্টগ্রামের এত এত উন্নয়ন সবই প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবতার ফসল।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে বাদক দলের মনোমুগ্ধকর দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনার সাথে সাথে পলোগ্রাউন্ডের বুকে শতাধিক ঘুড়ি উড়িয়ে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে পুনরায় নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করেন ঘুড়ি প্রেমিকগণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, কাউন্সিলর আতাউল্লাহ চৌধুরী, সাবেক কমিশনার সিরাজুল ইসলাম, আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুল হক সুমন, শওকত হোসাইন, ফরহান আহমদ, খলিলুর রহমান নাহিদ প্রমুখ।
এর আগে শনিবার নাগরিক উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আউটার রিং রোড থেকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির র‌্যালির আয়োজন করে। সাথে ছিল বাবুল জলদাস ও তার টিমের ঢোল বাদন। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বানানো মঞ্চ তখন ঢোল আর বাঁশির মোহনীয় সুরে মুখর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচটির মধ্যে সচল কেবল একটি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬