পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষে ১২ টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল নগরীর সার্কিট হাউসে এ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বার, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার, ক্যাব, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতির প্রতিনিধি, সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে–পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সেজন্য পাটজাত পণ্যের উৎপাদন, ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে হবে। স্কুল–কলেজ পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করে ছাত্র–ছাত্রীকে সচেতন করতে হবে। পলিথিন বিক্রি, ব্যবহার বন্ধের নিমিত্তে এবং ভোক্তা পর্যায়ে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা, সেমিনারের আয়োজন পূর্বক কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পলিথিন তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প পণ্য হিসেবে পঁচনশীল পাটজাত, কাগজের অথবা কাপড়ের পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইনের ব্যবহার (যার কাছে পলিথিন ব্যগ থাকবে তার উপর) যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও যথাযথ (চেম্বার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পাট উন্নয়ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট) কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে যৌথ উদ্যোগে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার, মজুদ ও বাজারজাতকারীর উপর সংশ্লিষ্ট আইন যথাযথ প্রয়োগের (মোবাইল কোর্টের) মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এ বর্ণিত ১৯ টি পণ্য (ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ–খুদ–কুড়া, পোলট্রি ও ফিস ফিড) পাটের মোড়ক ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত পণ্য সমূহে যে সকল উৎপাদনকারী পলিথিন জাতীয় পণ্য ব্যবহার করেন তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই নগরীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আগামী ১ জুলাই পলিথিন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন বা পলিথিন সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই ভয়াবহ অবস্থা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অপরদিকে, পলিথিন উৎপাদনের কারণে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি সামগ্রী আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ নিষিদ্ধ করার লক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০১০ সনের ৫০ নং আইন সংশোধিত) প্রণয়ন করা হয়। এই আইন কার্যকর বা পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষে মূলত এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।