চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর তিন কাঁচা বাজারকে পলিথিন মুক্তির পরীক্ষামূলক কর্মসূচি শুরু করেছে। কাপড় বা চটের থলে পলিথিনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে চলছে গণ প্রচার অভিযানও। উল্লেখ্য,বিজয় মাসের প্রথম দিন থেকে নাগরিক সচেতনতার কাজটি শুরু হয়েছে। আমরা জানি, এবারের বিজয় মাসটি বিশেষ মহিমান্বিত মাস। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে এবার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে ব্যাপক সরকারি বেসরকারি আয়োজন থাকলেও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী তেমন আলোচনায় নেই। এতে কিছু এসে যায়না। এক বছরে আমরা যে এতগুলো আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি, এটাই বড় অর্জন। স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫০ বছরে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। এটা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাধে। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো কোন বড় প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এগিয়ে নেয়া সম্ভব হতোনা, যদি ভিন্ন মতাবলম্বী কোন দল ক্ষমতাায় আসত। যা অতীতে বার বার ঘটেছে। ৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনা সরকারের যে সব উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচি চলমান ছিল, তা বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় এসে বাতিল করে দেয়। এমনকী সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারও আটকে দেয়! এর পেছনে সক্রীয়,ছিল প্রতিহিংসা। কারণ বিএনপি -জামাত জোট ‘৭৫ এর আগষ্ট বিভীষিকার বীজতলা থেকে উঠে আসা দল। আগস্ট ট্রাজেডির সবচে’ বড় সুবিধাভোগীও তারা। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধে সরাসরি জড়িত থেকেও জামাত দায়মুক্তি পেয়ে যায় জিয়ার স্নেহে।
ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় যেমন উন্নয়ন অভিযাত্রা সুগম হয়, যদি রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়াশীল বিপরীত শক্তির বড় প্রভাব থাকে। আবার অতি ভোগজনিত অবসাদে সরকার ও প্রশাসনের গতি থামিয়ে দেয়। ধারাবাহিক সরকারের ভোগজনিত অবসাদ রোগটি ভয়ঙ্কর, যদি পর্যাপ্ত মেরামতি বা চিকিৎসা না হয়। সৌভাগ্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার, দল ও প্রশাসনের দুষ্ট মেদ ঝরাতে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পরিশ্রম করছেন দিনে টানা প্রায় ১৬ ঘন্টা। তবুও মেদ আবর্জনা অপসারণ কঠিন হয়ে গেছে। যোগ্য সহযোগী সাথে না থাকলে তাঁর একার পক্ষে এটা অসম্ভব। এটা নানাভাবে প্রমাণিত সত্য। নিজে সরাসরি বলেছেন, তিনি ছাড়া দলের প্রায় সবাইকে কেনা যায়। বাস্তবে ঘটছেও তাই। প্রমাণ খুঁজতে লন্ঠন হাতে ঘোরার দরকার নেই। চারপাশে চোখ মেলে থাকালেই যথেষ্ট। দুঃখজনক হচ্ছে, ভোগ অবসাদের মেদভারে বেশি পিষ্ট হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক হ্রদপিন্ড চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত আগ্রহে বহু লক্ষ কোটি টাকার মহা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু মহানগর চট্টগ্রামে এর বড় সুফল এখনো পড়ছে না। তীব্র সমন্বয়হীনতা, কিছু নীতি নির্ধারনী বড় পদের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্তি, নাগরিক দায় পালনে অবজ্ঞা ও ব্যাক্তি অহং এর জন্য দায়ী। জের টানতে হচ্ছে ৭০ লাখ নগরবাসীকে। বিপুল মানুষের বড় নগরটি কোনভাবেই সুশৃঙ্খল ও নাগরিক সেবাবান্ধব নগর হচ্ছেইনা। যানজট, জলজট, বর্জ্যজট, দখলজট সব মিলেমিশে অপরিচ্ছন্ন অস্বাস্থ্যকর নগরীর উদাহরণ হয়ে থাকছে। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই, পলিথিন প্রসঙ্গে ফিরছি। পলিথিন নিষিদ্ধ ও সবচে’ বিপজ্জনক পণ্য। বহু আগেই পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু এটা আইনের কেতাবে আছে, বাস্তবে নয়। বলতে গেলে পলিথিন এখন নিত্যপণ্যের মত ঘরে ঘরে সমাদৃত! এর ভয়াবহতা নিয়ে আমরা বারবার সচেতন করেছি। নগরের সব নালা নর্দমা, খাল, নদী এমনকি বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পলিথিনের বিষাক্ত ছোবলে হাঁসফাঁস করছে। যে ‘হারে পলিথিন বর্জ্য নদী সাগরের তলা ভরাট করছে, এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রাম নগরসহ বিস্তীর্ণ উপকূল নিশ্চিহ্ন হওয়া বেশি দূরে নয়। অথচ জেনেশুনেই আমরা আত্মহননের পথে! বেআইনি পলিথিন কীভাবে যথেচ্ছ উৎপাদন ও অপব্যবহার হচ্ছে, দেখেও দেখছিনা। সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোও চুপ। কেন? উত্তর নেই। সিটি মেয়রের নগরীর কাঁচা বাজার থেকে পলিথিন অভিশাপ মুক্তির উদ্যোগ, অবশ্যই সময়োচিত। কিন্তু শুধু বাজার বা ঘর থেকে নয়, পলিথিন উৎপাদনের কারখানাগুলো বন্ধ না হলে বাজারে নিষিদ্ধ করে সুফল মিলবেনা। এরজন্য দরকার, সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থা, কর্পোরেশন ও সচেতন নাগরিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বিত টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্স পলিথিন উৎপাদক, সরবরাহকারী, মজুদদারসহ সবইকে প্রথমে সময় বেঁধে দেবেন। নির্ধারিত সময়ে ওরা কারখানা, গুদাম অন্য স্থাপনায় রূপান্তর করবেন। না করলে আইনানুগ কঠিন পদক্ষেপ নিতেই হবে। এর কোন নমনীয় বিকল্প নেই-একদম না। সিটি মেয়র নিজে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসলে চট্টগ্রাম থেকে পলিথিন উচ্ছেদের নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হবে পুরো দেশের সামনে। তাই বাজারের ডালপাতা নয়, যে’কোন মূল্যে গোড়া উপড়ে ফেলেই পলিথিনমুক্ত স্বাস্থ্যকর নগর উপহার দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, সাহিত্যিক