বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যটন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের বিকল্প গন্তব্য এখন থাইল্যান্ড। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশি পর্যটকরা বিপুল ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। যা এতদিন ভারতে যেত। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে ডলার খরচের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশিরা ভারতে গিয়ে সবথেকে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন। কারণ প্রতি বছরই চিকিৎসা কেনাকাটা ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে অসংখ্য বাংলাদেশি ভারতে যান। যার ফলে ক্রেডিট কার্ডে ভারতেই সবথেকে বেশি খরচ করতেন বাংলাদেশিরা। এখন সেই জায়গা দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড। ক্রেডিট কার্ডে ভারতে বাংলাদেশিদের ব্যয় তিন নম্বরে চলে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন থাইল্যান্ডে। দেশটিতে এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৪২ কোটি টাকা। অক্টোবরে এই খরচ একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ কোটি টাকায়। তাতেই বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে দেশটি। যদিও সেপ্টেম্বরেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারত।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে চিকিৎসা ও ভ্রমণে বাংলাদেশিদের অন্যতম গন্তব্য ছিল ভারত। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর ভিসা প্রদানে কড়াকড়ির কারণে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। যার ফলে দেশটিতে কমে গেছে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারও। তার বদলে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে বেছে নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
অর্থনীতির মুকুট হচ্ছে পর্যটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তো বটেই, এমনকি এ অঞ্চলের ছোট দেশ ভুটান, মালদ্বীপ, নেপালও পর্যটনকে শিল্প হিসেবে দাঁড় করিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এমন সুযোগ আমাদেরও ছিল। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলো সেই সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখলেও কার্যত এই ক্ষেত্রটি থেকে আমাদের অর্জন বলতে গেলে আশানুরূপ কিছু নেই। যদিও দেশের পর্যটনশিল্প ১০৯টি শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এক জরিপে জানা গেছে, পর্যটনশিল্প প্রতি আড়াই সেকেন্ডে একটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। একজন পর্যটকের আগমনে সেবাখাতে ১১ জন মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়। পরোক্ষভাবে কাজ পান আরও ৩৩ জন। অর্থাৎ এক লাখ পর্যটকের আগমনে ১১ লাখ কর্মসংস্থান যুক্ত হয়। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
ইতোপূর্বে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকলেও কেবলমাত্র যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই পুরো খাতটি মারাত্মকভাবে মার খাচ্ছে। পাহাড়, নদী ও সাগরের অপূর্ব মিলনস্থল চট্টগ্রামে পর্যটনের নানা উপকরণ প্রাকৃতিকভাবে থাকলেও যথাযথ উপস্থাপন করতে না পারায় সব আয়োজনই ব্যর্থ হচ্ছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রেস্ট হাউজ গড়ে উঠেছে। বেসরকারি উদ্যোগে পাঁচ তারকা হোটেলও হয়েছে। কিন্তু পর্যটনের বিকাশ যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুন্নত অবকাঠামো, পর্যটন স্পটগুলোকে বিশ্বমানে রূপান্তর না করা, স্পট সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বাড়তি আকর্ষণ তৈরি না করা, সাংস্কৃতিক আয়োজন না থাকা, পরিচালনে রাজনৈতিক প্রভাব, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব ও সর্বোপরি সরকারের সুনজর না থাকায় এই অঞ্চলের পর্যটনের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ ঘটছে না। তবে এসব ক্ষেত্রে নজর দিতে পারলে দেশের পর্যটন খাতের আয়কে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্পটগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি।এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা। এই শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পেশাদার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারবে।