পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| বুধবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ


– কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাটি দেশের মানুষের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষত বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যারা পরিবার নিয়ে বেড়াতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে নিরাপত্তার জায়গায় আস্থা রাখতে সন্দিহান হয়ে উঠছে। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে নারী পর্যটককে অপহরণের পর গণধর্ষণের ঘটনাটি শুধু দুঃখজনক নয়, বেদনাদায়কও। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের শিশু সন্তানসহ গৃহবধূ কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সাগরের পানিতে নামতে গিয়ে অপরিচিত এক যুবকের সাথে স্বামীর সামান্য ধাক্কা লাগে এবং কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্ধ্যায় যখন তারা হোটেলে ফিরছিলেন তখন মাঝপথে গতিরোধ করে স্বামী-সন্তানকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় এবং ভিকটিম গৃহবধূককে আর একটি অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তদল। নারী পর্যটককে প্রথমে সৈকতের একটি ঝুপড়ি ঘরের পিছনে নিয়ে গণধর্ষণ এবং পরে একটি হোটেলে নিয়ে আরেক দফা গণধর্ষণ করে।
– আমরা জানি, পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ বেড়াতে যায় একটু প্রশান্তির খোঁজে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে কোথাও স্বস্তিতে সময় কাটানো যায় না। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে, তা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রকৃতির অপার দান এবং বিরল এসব পর্যটন এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণসহ থাকার সুব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের পর্যটন শিল্প অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো। শুধু এসব পর্যটনকেন্দ্রই নয়, দেশের অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেতো, তেমনি এটি অর্থনীতির অন্যতম খাতে পরিণত হতো। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করা যেতো। সরকারের উচিৎ পর্যটন খাতটির দিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া। পর্যটকদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ব্যবস্থা এবং তারা যাতে নিশ্চিন্তে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে, এ জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের তরুণ সমাজকে বিপথে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পর্যটনের মাধ্যমে দেশকে জানা ও বোঝার প্রতি আকৃষ্ট করতে উৎসাহমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
– কক্সবাজারের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আশেক মাহমুদ লিখেছেন, তথ্যগুলো এ ধারণা দিচ্ছে, জনগণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বে অবহেলাকে স্বাভাবিক জ্ঞান করে। এ ধরনের ঘটনা চোখের সামনে ঘটলেও আমরা অনেকেই না দেখার ভান করে নিজেরা উপভোগ করতে থাকি। এর মানে- আমাদের সামাজিক বন্ধন, পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীলতা এতই নিচে নেমে গেছে; প্রতিবাদ দূরের কথা, ৯৯৯-এ কল দেওয়ার বোধশক্তিও হারিয়ে ফেলছি! এই আমরাই তো সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। এমন মূল্যবোধ নিয়ে চাকরি করলে অবহেলাই বাড়বে। সুতরাং এর দায়ভার সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ওপর বর্তাবে। তিনি বলেছেন, আমাদের সিভিল সোসাইটিকে এমনভাবে গতিশীল করতে হবে, যাতে প্রতিটি সামাজিক সংগঠন অপরাধের দ্রুত বিচারের দাবি জোরালো করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রত্যেক আসামি বা সন্ত্রাসীর অতীত অপরাধের রেকর্ড আছে। সে অনুযায়ী জামিন ব্যবস্থাকে আরও কঠিন করে তুলতে হবে। জামিনের পর তাদের নজরদারিতে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও নজরদারি জোরদার করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি। দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি এবং অপরাধের শাস্তি- দুই-ই নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তার কার্যকারিতা হারাবে। সে উপলব্ধি থেকেই কক্সবাজারসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনের পুরস্কার আর দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি- এই মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠন করা সহজতর হবে।
– পর্যটন শহর কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনভিপ্রেত। শুধু কক্সবাজার নয়, সকল পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করবো, সেখানে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সবকিছু সরব-সচল থাকবে। পর্যটকরা সারারাত ঘুরে বেড়াবে, আনন্দ- ফূর্তিতে সময় কাটাবে নিশ্চিন্তে সেই নিশ্চয়তা থাকবে। যেন কোনো টেনশন না থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে