গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল– ‘পর্যটন শান্তির সোপান‘। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যেমন অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে, তেমনি শিল্প–সংস্কৃতির আদান–প্রদানে মানুষকে করে তুলবে উদার। কিন্তু বাংলাদেশে এ খাতটি এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। নিরাপত্তাহীনতা, সুযোগ–সুবিধাসহ নানা কারণে পিছিয়ে রয়েছে দেশের পর্যটন খাত। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন উদ্যোক্তাসহ সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ। তাঁরা বলেন, বেসরকারি খাতের সঙ্গে মিলে আমরা আমাদের পর্যটন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আমরা যদি আমাদের বিমানবন্দরের অবকাঠামোগুলো আরো উন্নত করতে পারি, তাহলে আমাদের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে পর্যটকরা নিরাপদ বোধ করেন না বলে ঘুরতে আসেন না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈল প্রপাত হলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম নাসরীন জাহান। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহীম ভীনার স্বাগত বক্তব্যে মুখ্য আলোচক ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। এছাড়া মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। স্বাগত বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহীম ভীনা বলেন, পর্যটন শুধু নিছকই বিনোদন বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নয়, এটি অর্থনীতিরও একটি বিষয়। আমাদের দেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আছে। মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, আমাদের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমাজে শান্তি না থাকলে পর্যটন শিল্প বিকশিত হয় না। তাই পর্যটনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সমাজে শান্তির প্রয়োজন রয়েছে। পর্যটন বৃদ্ধি পেলে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি সংস্কৃতি আদান–প্রদান হবে। সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে।
আসলে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। কিন্তু এ বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা এ খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার–প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও যদি ঘুরতে বের হয় তাহলে ১৬ লাখ পর্যটক পাবো আমরা। কিন্তু এ বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য কি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের দেশে রয়েছে? এটি আমাদের বাড়াতে হবে। এতে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, পর্যটন শিল্পকে ঘরের কোণা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে উদ্যোক্তাসহ সরকারি–বেসরকারি সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পর্যটন ব্যক্তি মানুষকে বিশাল করে তোলে। পর্যটন মানুষের জীবনের আত্মশুদ্ধি করে। কারণ পর্যটনের মাধ্যমে একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে মিলছে, অন্য ভাষার মানুষের সঙ্গে মিলছে, অন্য সংস্কৃতি, অন্য খাওয়া–দাওয়া– সব কিছুর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। যখন একজন মানুষ অন্য দেশ, ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতির সঙ্গে মিশবে, তখন সে অনেক উদার হবে। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে পর্যটন খাতকে বিশ্বের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবো।
বলা জরুরি যে, পর্যটনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য। পর্যটন অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা তৈরি করে, যা দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ মানুষের উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। স্থানীয় অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে পর্যটন অনেকের জীবিকা নির্বাহের উৎসও হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পারস্পরিক স্বার্থ–সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির জন্য সরকারি–বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করে।
বিশেষজ্ঞরা নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলে এ শিল্পকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।