পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে চাই সমন্বিত পরিকল্পনা

| মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

আজাদীতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সেন্টমার্টিন হাজারো পর্যটকে গিজগিজ করে। চট্টগ্রামকক্সবাজার শহরসহ টেকনাফের দমদমিয়ার জেটিঘাট দিয়ে দৈনিক ৯টি জাহাজ এবং কায়ুকখালী (কেকে) খালের ঘাট দিয়ে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট ও কাঠের ট্রলারে যাচ্ছেন অন্তত ৪/৫ হাজার পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭ হাজারে।

অর্ধেকের বেশি পর্যটক রাতযাপনের জন্য উঠেন দ্বীপের আড়াই শতাধিক হোটেলরিসোর্টকটেজে। পর্যটকদের অভিযোগ, মানুষের অত্যধিক চাপের অজুহাতে রিসোর্ট ও কটেজ মালিকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। খাওয়ার হোটেলগুলোতেও বেশ দাম গুণতে হচ্ছে।

আসলে দেশের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি না। পর্যটকদের আগ্রহকে পুঁজি করে এই শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়। বিশেষত কক্সবাজার সেন্টমার্টিনকে ঢেলে সাজানো যায়। নানাবিধ সমস্য বা সংকট দূর করে এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বলা অনাবশ্যক যে, সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে প্রধান অন্তরায় হলো এলাকার রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। শহরের অভ্যন্তরের সড়কগুলোর দুর্বিষহ অবস্থা এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তূপ পুরো নগরীর পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক আজাদীতে। ‘কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে বাধা রাস্তাঘাট ও পরিবেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে প্রত্যাশার কাছাকাছি অগ্রগতি ঘটলেও একটি বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসাবে বিকশিত হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক দশা। বিমানে এক ঘণ্টারও কম সময়ে রাজধানী থেকে কক্সবাজারে পৌঁছা যায়। কিন্তু স্থলপথে আসা যাওয়া এখনও বেশ ভোগান্তির। সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিমানে দৈনিক হাজারের কম মানুষ আসা যাওয়া করতে পারেন। বাকিদের আসতে হয় স্থলপথেই। পথে পথে রাস্তাঘাটে রয়েছে নানা দুর্ভোগ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তারও করুণ দশা। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে খোলা ডাস্টবিন ও যত্রতত্র দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তুপ পর্যটন শহরের সাথে মানানসই নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের পর্যটন শিল্পের যে নাজুক পরিস্থিতি, তাতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প যে কী অবস্থায় আছে, তা সহজে অনুমেয়। তবু আমরা শিল্পের বিকাশের ব্যাপারে আশাবাদী। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও। আমরা যদি বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করতে চাই, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ‘কক্সবাজার’এর নামটি সর্বাগ্রে চলে আসে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি টেকনাফ সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, উখিয়া সৈকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রভৃতি নামও পর্যটন শিল্পের খাতায় চলে আসবে।

আমাদের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হলেও যাতায়াত ব্যবস্থার নানা সমস্যার কারণে আজও পর্যটন শিল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করেনি। ইদানীংকালে সেখানে হোটেল শিল্প বিকাশ লাভ করলেও ‘পর্যটন কর্পোরেশন’এর নিয়ন্ত্রণাধীন মোটেলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কক্সবাজারস্থ মোটেলগুলোতে ছাড়পোকা ও তেলাপোকার অবাধ বিচরণ বলে অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে পরিবেশের বিষয়টি নজরে রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। পরিবেশ ঠিক না থাকলে পর্যটকরা স্বস্তি পাবেন না। কক্সবাজারের পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিবেশ। সেটা পর্যাপ্ত না হলে মানুষ এখানে কেন আসবে? তাই রাস্তাঘাটের আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলে এ শিল্পকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।

সরকার কক্সবাজারকে একটি বিশ্বমানের পর্যটননগরী হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। এজন্য নানা পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আমরা চাই, কক্সবাজার দেশের পর্যটন শিল্পে আরো অবদান রাখুক। তারজন্য চাই যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ এখানকার যাবতীয় সমস্যা ও সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে