এমনিতেই কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর দুদিন আগেও নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে পশ্চিমারা। বলতে গেলে তাদের বিশ্বকাপ বিনোদনের অনেক কিছুই রাখেনি কাতার কর্র্তৃপক্ষ। সবশেষ স্টেডিয়ামে বসে বিয়ার খাওয়াটাও নিষিদ্ধ করেছে। আর তাতেই অনুমান করা গিয়েছিল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও তেমন জমকালো বা চোখ ধাঁধানো হবেনা। হয়েছেও তাই। ছিলনা তেমন কোন আকর্ষণীয় আয়োজন। ছিলনা শাািকরা কিংবা ম্যাডোনার মত লস্যময়ী গায়িকার মনে আগুন ধরানো পরিবেশনা। প্রায় এক ঘন্টার সাদামাটা অনুষ্ঠানে যা ছিল তার বেশির ভাগই আরব সংস্কৃতিকে ঘিরে।
আরবদের ইতিহাস ঐতিহ্যকেই যেন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা যায় আরব সংস্কৃতির সুতোর টানেই পর্দা উঠল কাতার বিশ্বকাপের। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ব্যস্ততম শহর আল খোর এর আল বাইত স্টেডিয়ামে পর্দা উঠে বিশ্বকাপের ২২ তম আসরের। প্রায় ৬০ হাজার দর্শক আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে অনুষ্টানটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়। যা চলে প্রায় এক ঘন্টার মত।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন গানেম আল মুফতাহ। এরপর এবারের বিশ্বকাপের মাসকট ‘লা ইব’ প্রদর্শিত হয়। ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবলার এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মার্শেল দেশাই প্রথমে বিশ্বকাপ ট্রফির প্রদর্শনী করেন স্টেডিয়ামে স্থাপিত মঞ্চে। তুমুল করতালি এবং চিয়ার্স ধ্বনির মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি বরণ করে নেয় দর্শকরা। বিশ্বকাপ ট্রফি প্রদর্শনের পরই মঞ্চে আসেন বিখ্যাত হলিউড অভিনয় শিল্পী মরগ্যান ফ্রিম্যান।
তার সঙ্গে মঞ্চে আসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ঘানেম। দুজন মিলে বিশ্বকে এক করার বার্তা দিলেন। তারা যেন জানিয়ে দিলেন ফুটবল বিশ্বকে এক করতে পারে। ফুটবল সোনালী দিনের বার্তা দিতে পারে। এরপরই কাতারের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরে মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দেখান পারফরমাররা। একই সঙ্গে চলে আলোর দুর্দান্ত সব কারুকাজ। এর মধ্যেই প্রদর্শিত হলো অংগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা। মডেলদের দেখা গেলো প্রতিটি দলের জার্সি পরে মঞ্চে ক্যাটওয়াক করতে।
যেহেতু কাতার মুসলিম দেশ তার উপর আরব দেশ তাই আগে থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল তেমন খোলামেলা কিছু থাকবেনা উদ্বোধনী অনুষ্টানে। একে একে বিশ্বকাপের সবগুলো মাসকটের প্রদর্শনী হলো অনুষ্ঠানে। তবে সবচাইতে বড় আকর্ষণ ছিল কাতার বিশ্বকাপের মাসকট লা’ইবের প্রদর্শনী। বিশাল আকারে সাদা জামা পরিহিত মাসকটের মাথায় কালো আরবীয় ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি বাঁধা।
কাতারের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য তুলে ধরার পর মঞ্চে আসেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীগোষ্ঠী বিটিএসের শিল্পী জুং কুক। তার সঙ্গে গানে অংশ নেন কাতারি সংগীত শিল্পী ফাহাদ আল কুবাইসি। এবারের থিম সং হ্যায়া হ্যায়া (যার অর্থ বেটার টুগেদার) ছাড়াও আগের আসরের জনপ্রিয় থিম সং যেমন ওয়াকা ওয়াকা, ওলে ওলে শোনানো হয়। কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক কিমিটির এক কর্মকর্তা আরবি ভাষায় দিলেন স্বাগত বক্তব্য।
সবার শেষে আল বাইত স্টেডিয়ামের চারপাশ থেকে জ্বলে উঠলো কয়েক হাজার আতশবাজির আলোর ঝলকানি। যেন আকাশ থেকে আলোর ঝর্নাধারা বইছে। পুরো স্টেডিয়ামের দুপাশ যেন দুই রঙে ভাগ হয়ে গিয়েছির। একপাশে ইকুয়েডরের হলুদ জার্সি আর অন্যদিকে স্বাগতিক কাতারের মেরুন জার্সি। সব মিলিয়ে দারুন আবহে যাত্রা শুরু হলো কাতার বিশ্বকাপের।