পরীর পাহাড়ের বিভিন্ন ভবন বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম সরেজমিনে পরীর পাহাড় পরিদর্শন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি রিপোর্ট প্রণয়নের কাজ করছে। রিপোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি উপস্থাপিত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক পরীর পাহাড়ের পাদদেশেই অবস্থিত। সরকারের কেপিআই-১ ভুক্ত স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এসব স্থাপনার ধারে কাছে কোন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হলে কেপিআই ডিফেন্স কমিটির অনুমোদন লাগে। প্রতিরক্ষা সচিবের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি কেপিআইভুক্ত স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল কোন অবকাঠামো গড়ার অনুমোদন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং ভল্ট কেপিআইভুক্ত স্থাপনা হলেও এটির ধারে কাছে গড়ে উঠা অবকাঠামোর ব্যাপারে কোন ধরনের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এরমধ্যে আইনজীবী সমিতির ভবনও রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে পরিবেশ মন্ত্রনালয়, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন। ওই কমিটি পরীর পাহাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন স্থাপনা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আইনজীবী সমিতি কেপিআই নীতিমালা লংঘন করে তাদের ভবনগুলো নির্মাণ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সরজমিনে পরিদর্শন করে বলা হয়েছে যে, আইনজীবী ভবনে নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে যা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্যই নয়, পুরো এলাকার জন্যই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে আইনজীবী ভবনগুলোর পিছনের অংশে সরেজমিনে পরিদর্শনের বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভবনের পিছনের অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিটেইনিং ওয়ালের লোড বিয়ারিং বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ভবনটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে যে, আইনজীবী সমিতির ৫ টি ভবন একটি অপরটির সাথে লাগালাগি করে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে শত শত চেম্বার, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কোন কারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে পিছন দিক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন সিঁড়ি বা এঙিট ভবনগুলোতে নেই। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, কোন দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ঘটলে এখানে শত শত মানুষের প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।
পরিদর্শনকালে সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী ভবন করতে হলে চারপাশে একটি নিদিষ্ট পরিমাপের ভূমি ছাড়তে হয়। আইনজীবী সমিতি ভবন নির্মাণের সময় বাইরে কোন জায়গা খালি রাখেনি। আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীদের শত শত গাড়ি এসব ভবনে আসলেও ৫ টি ভবনের সামনে, পেছনে কিংবা বেসমেন্টে কোথাও কোন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সমিতি অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করে ইমারত নির্মাণ আইন লংঘন করেছে বলেও সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সরজমিনে পরিদর্শন শেষে তৈরি করা রিপোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো হবে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন।