পরীর দেশে নুহা

আবদুল লতিফ | বুধবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ

নুহাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা খাল। খালের দুই পাড়ে বিশাল বড়ো বড়ো শতবর্ষী দুইটা গাবগাছ। এই গাব গাছে পরী দেখার গল্প অনেকের কাছেই শুনেছে নুহা। সেই থেকে পরী দেখার খুব ইচ্ছে তার। তাই যারা দেখেছে বলে দাবি করে তাদের কাছে নুহা অনেক করে জানতে চেয়েছে পরীরা কখন আসে, কিভাবে আসে, কি করলে নুহাও পরীদের দেখতে পারবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কারো কোনো পরামর্শেই তার পরী দেখার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার, অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝরাতে থালাবাসনের টুংটাং শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলো নুহা। সাহস করে দক্ষিণের জানালাটা আস্তে করে একটু ফাঁক করতেই স্পষ্ট দেখতে পেল খালের পাড়ের গাব গাছটার গোড়ায় বসে খালের পানিতে থালাবাসন ধোয়ায় ব্যস্ত ধবধবে সাদা শাড়ি পরা কজন মহিলা। অন্ধকারে তাদেরকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিলো। গাছের আশপাশ তাদের রূপের স্নিগ্ধ আলোয় ভাসছিলো। নুহার বুঝতে আর বাকি রইলো না যে সেই পরীর দেখা সে এতদিনে পেয়ে গেছে। ভালো লাগার পাশাপাশি একটু ভয়ও পাচ্ছিলো। কিন্তু মুহূর্তেই তার ভয় কেটে গেলো, যখন একটা পরী হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে নাম ধরে ডেকে বলল, “এই নুহা তুমি ভয় পাচ্ছ কেন, তুমি না আমাদের খুঁজছিলে?” আসো আসো বাচ্চাদের সাথে খেলবে অনেক মজা হবে। ততক্ষণে ছোট্ট একটা বাচ্চা পরী যার ঘনকালো চুলের সুন্দর বিনুনিতে ফুল গুঁজে রাখা, এসে হাত বাড়াতেই নুহা তার হাত ধরে পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে। দুজন গিয়ে গাব গাছের একেবারে মাথার উপরে উঠে গেলো। সেখানে গিয়ে নুহা তো অবাক! এতো সুন্দর পরিবেশ কখনো দেখেনি সে! সুবিশাল বাগানে ফুল ভর্তি এক একটা তাজা ফুল গাছই এক একটা বসার চেয়ার। সেই চেয়ারে বসেই তারা খাওয়া দাওয়া করে। আর ফুলের ঘ্রাণে চারপাশ মৌ মৌ করছে।

সেখানে যাওয়ার পর আরও অনেক বাচ্চা পরী এসে ভীড় করলো। নুহাকে পেয়ে সবাই অনেক খুশি। একটু পরে নুহাকে নিয়ে সবাই সুগন্ধি সাবান দিয়ে ভালো করে হাতমুখ ধুয়ে এসে একসঙ্গে খেতে বসলো। খাওয়া শেষে আবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করে স্কুল ব্যাগ কাঁধে গল্প করতে করতে স্কুলের উদ্দেশ্যে চললো।

বাচ্চা পরী দেখতে আরও অনেক বেশি কিউট। ছোট ছোট ডানাগুলো মেলে যখন উড়তে থাকে তখন দৃষ্টি ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে। বাচ্চা পরীদের সাথে নুহাও কখন যে ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে তা টেরই পায়নি। উড়ে উড়ে আকাশের মেঘগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলো তারা আর বলছিলো, যারা খাওয়ার সময় খাওয়া, পড়ালেখার সময় পড়ালেখা, খেলার সময় খেলা আর ঘুমের সময় ঘুমায়, তাদের শরীর ও মন থাকে সুস্থ এবং তাদের জীবন সদা হাসি আনন্দে ভরা থাকে, তাই পরীরা সবসময় এসব নিয়ম মেনে চলে।

গল্প করতে করতে তারা স্কুলে পৌঁছে যায়। স্কুলে পৌঁছে নুহা তো আরও অবাক। এটা কি স্কুল না স্বর্গোদ্যান! কতরকম ফুল আর ফলের গাছ যে স্কুল চত্বরে আছে তা বর্ণনাতীত।

নুহা একটা বিষয় লক্ষ করলো পরীদের সবকিছুতেই ফুলের ছোঁয়া থাকে। দেখতে দেখতে একসময় স্কুলের বিশাল বড়ো ডিজিটাল পর্দায় ভেসে উঠলো নুহার হাসিমুখের ছবি। স্পিকারে ঘোষণা আসলোআজ আমরা নুহাকে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত, তাই এখন আমরা সবাই নুহাকে ফুল দিয়ে বরন করে নেবো। তখনই চারপাশে এক অদ্ভুত সুন্দর আলো জ্বলে উঠে। আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ফুলের পাপড়ি ঝরতে শুরু করে। সবাই এক সঙ্গে হাততালি দিয়ে নুহাকে শুভেচ্ছা জানায়। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, অসাধারণ অনুভূতি! সবার হাতে হাতে নুহার জন্য পুষ্প সজ্জিত বর্ণিল গিফট বঙ এবং প্রতিটা বঙের গায়ে নুহার হাসিমুখের সুন্দর সুন্দর ছবি। সবাই নাচে গানে মেতে উঠলো, সঙ্গে নুহাও। নুহাকে বরন অনুষ্ঠানের পরেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষে সবাই তাদের গিফট বঙগুলো একে একে নুহার হাতে তুলে দিতে শুরু করে। তখনই মা এসে ডাকলেন নুহা উঠো উঠো স্কুলের সময় বয়ে যাচ্ছে। মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে ঘুম ঘুম চোখে নুহা তার গিফট বঙগুলো খুঁজতে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝিঁঝিঁ পোকা
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে গভীর রাতে আগুন, নিঃস্ব ১২ পরিবার