পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ, বাকি দুই শতাংশ কাজ শেষ হলেই শুরু হবে পুরোদমে কার্যক্রম

পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল খালাস

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২১ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

সব পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ। সফলভাবে সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রকল্পের দুই শতাংশ কাজ বাকি থাকায় সাগরের তলদেশে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের কার্যক্রম এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। চীনা কোম্পানি চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড বেশ জোরেশোরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে। মহেশখালী থেকে পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারী পর্যন্ত পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের এই নয়া কার্যক্রম শুরু হলে জ্বালানি নিরাপত্তা ছাড়াও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বছরে অন্তত ৮শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মহেশখালী থেকে সাগরের তলদেশ এবং উপরিভাগ দিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারী পর্যন্ত আনা পাইপ লাইনে আর কোনো ত্রুটি নেই। ইতোমধ্যে ৩৬ ইঞ্চি এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যসের ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইনের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতবছর এই ধরনের পরীক্ষামূলক জ্বালানি তেল খালাসকালে পাইপে যে ত্রুটি ধরা পড়েছিল তা সারিয়ে তোলা হয়েছে। পাইপ লাইনে প্রথমে বাতাস, পরবর্তীতে পানি এবং সর্বশেষ জ্বালানি তেলসহ ‘পিগ’ পাঠানোর কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সবগুলো পরীক্ষাতেই প্রকল্পটি উতরে গেছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীর ট্যাংক থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারীতে এক ৬০ হাজার টন ডিজেল এবং এবং ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল পরিবহন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ দুই শতাংশ বাকি থাকায় পুরোদমে জ্বালানি তেল পরিবহনের কার্যক্রম এখনি শুরু করা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সূত্র জানিয়েছে, আমদানিকৃত জ্বালানি তেল দ্রুত ও সাশ্রয়ী পন্থায় খালাসের জন্য মহেশখালীর অদূরে গভীর বঙ্গোপসাগরে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাত হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্র থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুইটি পাইপ লাইন মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক পর্যন্ত এবং মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুইটি পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়। মহেশখালী থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারী পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইনের মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোরে এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোরে স্থাপন করা হয়েছে। জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনের মাধ্যমে খালাস করে মহেশখালীতে নির্মিত দুইটি আলাদা ট্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল রাখার ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্রুড এবং ডিজেলের ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার টন। মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুইটি পাইপ লাইনের একটি দিয়ে ক্রুড অয়েল এবং অপরটি দিয়ে ডিজেল পরিবাহিত হবে।

জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপ লাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানি প্রকল্পটির পাইপ লাইনসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ করে এনেছে। দুই শতাংশ কাজের মধ্যে বড় ধরনের কোনো কাজ না থাকলেও টুকটাক কিছু কাজ রয়েছে। নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে এই শতাংশ কাজও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগে জ্বালানি তেল পরিবহনের অনুমোদন দিচ্ছে না নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছে, পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ। প্রকল্পের মেয়াদও আগামী জুন পর্যন্ত রয়েছে। এরমধ্যে আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেব। তখন পুরোদমে জ্বালানি তেল পরিবহন করা যাবে।

বিপিসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ। সবই ঠিকঠাক আছে। তবে প্রকল্পের টুকটাক যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলোকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাই আমরা কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। আগামী জুলাই মাস নাগাদ মহেশখালী থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল খালাসের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তাকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে। আমাদের জ্বালানি তেলের ধারণক্ষমতা বাড়ছে। সবচেয়ে বড় যে সুবিধা তা হলো এক জাহাজ ক্রুড অয়েল খালাস করতে যেখানে কমপক্ষে ১৫ দিন লেগে যেতো তা এখন মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সম্পন্ন করা যাবে। মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজে জ্বালানি তেল লাইটারিং করা বন্ধ হওয়ায় সিস্টেম লস অনেকটা কমে যাওয়ার পাশাপাশি শুধু জাহাজভাড়া বাবদ বছরে অন্তত ৮শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। শুধু লাইটারেজ জাহাজের ভাড়াই নয়, দিনের পর দিন মাদার ভ্যাসেলকে অপেক্ষা করানোর ফলে যে লাখ লাখ ডলার বাড়তি পরিশোধ করতে হতো তা থেকেও নিস্তার মিলবে বলে বিপিসির ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদার মুক্তির মেয়াদ ফের বাড়ছে, বিদেশযাত্রায় ‘না’
পরবর্তী নিবন্ধবুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম রাউজানের তামিম