পরীক্ষা দিতে পারাটাই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ মে, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন হচ্ছে ফারুয়া। উপজেলা সদর থেকে নৌপথে রাইংখ্যং খাল পাড়ি দিয়ে প্রায় ৫০ কিমি দূরে এই ইউনিয়নে যেতে হয়। দুর্গম এই এলাকাতেই অবস্থিত ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুল থেকে ৭৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা। তবে তাদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য একটিমাত্র কেন্দ্র বিলাইছড়ি সদরে অবস্থিত বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু এই শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ এবং রাইংখ্যং নদীর পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে ফারুয়ার মানুষের। হ্রদে পানি থাকাকালীন ফারুয়া থেকে উপজেলা সদরে যেতে যেখানে আড়াই থেকে তিনঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে বর্তমানে সময় লাগছে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মতো। ফলে বাধ্য হয়ে এসব পরীক্ষার্থীকে উপজেলা সদরে এসে কারো আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা ভাড়া করে হোটেলে মাসব্যাপী থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

তবে এবার এক্ষেত্রে বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি জানান, এ বছর শুষ্ক মৌসুমে রাইখ্যং নদী প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। ফলে এই এলাকার শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ২৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৪টায় ফারুয়া থেকে নৌকাযোগে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা রওনা দেন। ছাত্রছাত্রীদের সাথে ছিল তাদের বই, জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। নদীতে পানি না থাকায় নৌকা বারবার মাটিতে আটকে যাচ্ছিল। শিক্ষার্থীরা নদীতে নেমে নৌকা ঠেলে বিলাইছড়ি সদর অভিমুখে নৌকা নিয়ে এসেছে। মোট ছয়টি ইঞ্জিন চালিত নৌকার মধ্যে ১ম নৌকা বিলাইছড়িতে পৌঁছে বিকেল ৫টায়। শেষ নৌকাটি পৌঁছে রাত সাড়ে ১০টায়। নৌকা থেকে জিনিসপত্র নামাতে রাত সাড়ে ১১টা হয়ে যায় সেইদিন। এভাবে প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিলাইছড়ি সদরে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তিনি বলেন, এ বছর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের ঋণ শোধ করার নয়।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, যদি ফারুয়ায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকতো তাহলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। তাই অতি সত্ত্বর ফারুয়ায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু করা খুবই জরুরি। এটা ফারুয়া অভিভাবকদের প্রাণের দাবি।

বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে, শুকিয়ে যাওয়া রাইংখ্যং খাল বেয়ে তাদের উপজেলা সদরে এসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দিনে এসে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই আমরা পরীক্ষা চলাকালীন তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা উন্নয়ন করেন আর বিএনপি করে আগুন সন্ত্রাস : নওফেল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা