দেশে একেবারে কমে এসেছে করোনা সংক্রমণ। তবে শঙ্কায় ফেলছে ভারতে শনাক্ত হওয়া নতুন চীনা ধরন। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে মনে করছে সরকার। এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক হয়ে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
গত ২৬ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের চার গুণ বেশি সংক্রামক / বন্দরে স্ক্রিনিং জোরদারের নির্দেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বিএফ–৭ নামে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের চেয়েও চার গুণ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কথা জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, চীনে বিএফ–৫ এর নতুন ধরন বিএফ–৭ শনাক্ত হয়েছে। ধরনটি ওমিক্রনের চেয়ে শক্তিশালী। কম সময়ে বেশি মানুষকে এই ধরন আক্রান্ত করতে পারে। যারা টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার নতুন ধরন ভারতেও শনাক্ত হয়েছে। তাই দেশের সব বন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এই বিএফ–৭ করোনাভাইরাস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। টিকার মেয়াদ নিয়ে দ্বিধার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, টিকার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার সুযোগ নেই। টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুযায়ী ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষেই টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
একের পর এক ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন। ওমিক্রনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে বিশ্ববাসীকে এবার প্রস্তুতি নিতে হবে নতুন আরেক ধরন মোকাবিলায়। করোনার নতুন ধরন নিয়ে রীতিমতো ভাবাচ্ছে গবেষকদের। তাঁরা বলছেন, ভাইরাসের এই ধরন আগের যেকোনো ধরনের চেয়ে বেশিবার রূপ বদলাচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, করোনা চলে গেছে এটা যাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁদের কথা ভুল প্রমাণ করে চীন, জাপানসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে ব্যাপক হারে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ রোগতাত্ত্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে (১২–১৮ ডিসেম্বর) চীনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হন। এই সময় মারা যান ৩৩৭ জন। এই সময় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভারতে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৩০ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা আমাদের দেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ। চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বাড়লেও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
এবার ওমিক্রনের নতুন উপধরন ‘বিএফ–৭’ নিয়ে শঙ্কায় আছে মানুষ। কেননা চীনে নতুন করে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ফলে ভারতসহ বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি ৪ দফা সুপারিশ করেছে। এ অবস্থায় মাস্ক পরাসহ দ্রুত বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দেশের সব বন্দরে স্ক্রিনিং জোরদারের নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর থেকে শুরু করে সব জায়গায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে আইসোলেট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যারা এখনো টিকার বাইরে থেকে গেছেন, তাদের টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বলা অনাবশ্যক যে, টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ থাকলেও পরে কিন্তু আগ্রহ বেড়েছে। ব্যবস্থাপনাও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা চতুর্থ ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মোট কথা, করোনার নতুন সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হলে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। আশা করি, সেই প্রস্তুতি নিতে দেরি করবে না সরকার।