পরিশুদ্ধ রাজনীতিক মেধাবী উদ্যোক্তার পথিকৃৎ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কর্ণফুলি’ কবিতার পংক্তি উচ্চারণে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পরিশুদ্ধ রাজনীতিক ও মেধাবী শিল্প উদ্যোক্তা পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মৃতির প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাই। “সারিয়া এসেছি আমার জীবনে কূলে ছিল যত কাজ,/ এসেছি তোমার শীতল নিতলে জুড়াইতে তাই আজ!/ ডাকনিকো তুমি, আপনার ডাকে আপনি এসেছি আমি/ যে বুকের ডাক শুনেছি শয়নে স্বপনে দিবসযামি।/ হয়তো আমারে লয়ে অন্যের আজও প্রয়োজন আছে,/ মোর প্রয়োজন ফুরাইয়া গেছে চিরতরে মোর কাছে!/ –সে কবে বাঁচিতে চায়, জীবনের সব প্রয়োজন যার জীবনে ফুরায়ে যায়!/ জীবন ভরিয়া মিটায়েছি শুধু অপরের প্রয়োজন,/ সবার খোরাক জোগায়ে নেহারি উপবাসী মোরই মন!? আপনার পানে ফিরে দেখি আজচলিয়া গেছে সময়,/ যা হারবার তা হারাইয়া গেছে, তাহা ফিরিবার নয়!/ হারায়েছি সব, বাকি আছি আমি, শুধু সেই টুকু লয়ে/ বাঁচিতে পারিনা, যত চলি পথে তত উঠি বোঝা হয়ে!” কবিতার প্রাসঙ্গিকতায় বলা যায়; বাবু ভাই হৃদয়ে প্রোথিত জীবনের কথামালা সুচারুরূপে বর্ণনা করেছেন। তিনি অকাতরে দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার যে ব্রত ধারণ করেছিলেন; দেশবাসীর বিশ্বাস তাঁর অপরিমেয় কর্মযজ্ঞ ও আদর্শ অনুসরণ কলান্তরে অবিস্মরণীয় হয়ে উঠবে। তাঁর প্রয়োজন চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে নিরন্তর বোঝা না হয়ে অনুপ্রেরণার নৈর্ব্যক্তিক দর্শন হিসেবে জাগরুক থাকবে।

সমাজ ইতিহাস পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট যে, সুদীর্ঘ প্রাচীন ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম শুধু ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বপরিমন্ডলে অনন্য সাধারণ ভূমিকায় অবতীর্ণ। বঙ্গোপসাগরের বিশাল মোহনা ও নান্দনিকতায় পরিপুষ্ট কর্ণফুলি নদীকে কেন্দ্র করে প্রধান বন্দর নগরী হিসেবে বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে চট্টগ্রামের ইতিহাসসৌন্দর্যসৌকর্য বিশ্বনন্দিত। সামাজিকধর্মীয়অর্থনৈতিক উন্নয়নঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে অতি প্রাচীনকাল থেকেই চট্টগ্রাম নানামুখী সচল জীবনপ্রবাহনৈসর্গিক বৈচিত্রসংগ্রামী চেতনায় আবর্তমান পরাক্রান্ত আশ্রয়স্থল। সমুদ্রনদীর স্রোতধারার নিরবধি প্রতিধ্বনি এবং সবুজ অরণ্য ঘেরা প্রসারিত পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রামের অবস্থান বিশ্বের খ্যাতিমান পর্যটকদের অন্তর্দৃষ্টিবর্ণনায় অপরূপ ঐশ্বর্যের আবাসনে উচ্চকিত। বহুকাল আগে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী উচ্চারিত ‘চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে’ অমিয় বার্তায় চট্টগ্রামের গুরুত্ব অত্যধিক সমুজ্জ্বল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামমহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে সকল আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রামের অবদান স্বকীয় সত্তায় ভাস্বর।

চট্টগ্রামকে নিয়ে খ্যাতিমান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘চট্টগ্রামঃ ১৯৪৩’ শিরোনামে রচিত কবিতার কয়েকটি পংক্তি সম্মানিত পাঠকদের স্মরণে প্রবহমান করতে চাই– “ক্ষুদার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম-/ চট্টগ্রাম : বীর চট্টগ্রাম!/ বিক্ষত বিধ্বস্ত দেহে অদ্ভুত নিঃশব্দ সহিষ্ণুতা/ আমাদের স্নায়ুতে স্নায়ুতে/ বিদ্যুৎপ্রবাহ আনে, আনে আজ চেতনার দিন।/ চট্টগ্রামঃ বীর চট্টগ্রাম।” বীর চট্টগ্রাম খ্যাত দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের প্রয়াত যাত্রামোহন সেন, শেখএ চাঁটগাম কাজেম আলী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, মাষ্টারদা সূর্য সেন, লোকনাথ বল, আবদুল হক দোভাষ, রফি উদ্দিন সিদ্দিকী, সিরাজুল হক, ডা. এম.. হাশেম, খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী, ব্যারিষ্টার আনোয়ারুল আজিম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও পূর্ণেন্দু দস্তিদার, বাদশা মিয়া চৌধুরী, এম.. আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, . বি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ বরেণ্য সকল সামাজিকরাজনৈতিক ব্যক্তিমানসের কীর্তিগাথায় চট্টগ্রাম বরাবরই শুধু বাংলাদেশে নয়; ভারতবর্ষদক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অনন্যসাধারণ প্রতিভাত জনপদে বিশেষিত। চট্টগ্রামের আর্থসামাজিকরাজনৈতিক ইতিহাসে সামগ্রিক বিবেচনায় কিংবদন্তীর আসনে সমাসীনদের অন্যতম বাতিঘর দুঃসময়ের কান্ডারী আওয়ামী রাজনীতির পুরোধা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর কৃতিত্ব শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যতের জন্যও সুদূরপ্রসারী আলোকবর্তিকা।

দেশের প্রবেশদ্বার বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত কর্ণফুলির তীরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জন্ম নেওয়া দৃঢ়চেতানির্ভীকনিখাঁদ দেশপ্রেমিক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই শুধু চট্টগ্রাম নয়; স্বাধীনসার্বভৌম লালসবুজ পতাকার এই বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র সমতুল্য ব্যক্তিত্ব। আকাশচুম্বী গুণগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের রাজনৈতিকঅর্থনৈতিকসামাজিক পরিমন্ডলে বাবু ভাইয়ের অসাধারণ পদচারণা সকল মহলে শুধু সমাদৃত নয়; এক অভূতপূর্ব ইতিহাসের অনিবার্য অধ্যায় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। বিশ্বে অতুলনীয় বিস্ময়কর অবস্থানে মর্যাদাসীন হওয়া ব্যক্তিমানসদের ধারাবাহিকতায় মাটি ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় মমত্বদায়িত্ববোধ জন্মজন্মান্তরে সময়কালের পরিক্রমায় নতুন ধারার প্রবর্তক হিসেবে বাংলাদেশে প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু উঁচুমার্গে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাঁর সফল ও সার্থক প্রচেতা হচ্ছে; বিবেকআবেগদেশপ্রেমের চন্দ্রাতপ আচ্ছাদনে অকৃত্রিম নিষ্ঠামেধাশ্রমের পরিচর্যায় নিজের আবক্ষ অপরূপ শৈলীতে নিজেই তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় পরিপূর্ণ ঋদ্ধ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তিনি আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর তাঁর বাসা থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানোর মধ্য দিয়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও তাঁর বান্ডেল রোডস্থ বাসভবন স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য অবস্থানে অধিষ্ঠিত। পরবর্তীতে তার এই জুপিটার হাউজ ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিকগেরিলা কর্মকান্ড পরিকল্পনা ও বৈঠকের কেন্দ্রস্থল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ আখতারুজ্জামান বাবুর ভাই বশিরুজ্জামান চৌধুরী লাল সবুজের পতাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের পরিচিতিতে লাখ শহীদের একজন হয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

স্বাধীনতার পর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ অলঙ্কিত করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মমবর্বর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে জীবন ঝুঁকির বিনিময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে যথাযথ পথে পরিচালনা ও দলকে সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে আখতারুজ্জামান চৌধুরীর অবদান সর্বজনস্বীকৃত। স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন নির্যাতননিপীড়নযন্ত্রণাবঞ্চনা সহ্য করে শাসক গোষ্ঠেীর সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে দলীয় দুঃসময়ে নিষ্ঠাআন্তরিকতা ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি যথার্থ অর্থে একজন পরীক্ষিত নেতার মর্যাদায় সমাসীন হন। ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ২০০৮ সালে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সাংসদ নির্বাচিত হয়ে জনগণের কল্যাণে এবং এলাকার উন্নয়নে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদান ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং ২০১১ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের উচুমার্গে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাঁ ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই ধরিত্রীর সকল নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণের আড়ালে যাঁদের অবদান বিশ্বস্বীকৃত, প্রকৌশল বিজ্ঞানের আধুনিক ধারায় তাঁরাই স্থপতি অভিধায় অভিসিক্ত। মননসৃজনশীলঅপরূপ সৌন্দর্যের দৃষ্টিহৃদয়নন্দন শৈলীতে সৃষ্ট তাঁদের কর্মযজ্ঞ সময়ের আবর্তনে ইতিহাসের ঐতিহ্যিক অধ্যায়ে পরিণত। এখনও গ্রীকরোমানপাশ্চাত্যপ্রাচ্যের যেসব স্মৃতিস্তম্ভ নানামুখী কৃষ্টিসংস্কৃতির স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, এসবের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে মহান স্থপতিদের জ্ঞানমেধাযুক্তিপ্রকৃতিনির্ভর অনন্য সুন্দর কারুকাজের কাব্যগাথা। একজন সার্থকসফল স্থপতির জীবনগাথার অপূর্ব পটভূমি হচ্ছে তার সৃষ্ট কর্মের গ্রহণযোগ্যতা। প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে স্থপতির দৃষ্টিকোণ থেকেই মানবিকতামাঙ্গলিকতার নিদর্শন যুগ যুগ ধরে বিশ্ববাসীকে বাসযোগ্য আশ্রয়ের যেমন সন্ধান দিয়েছে যেকোন ধরনের সচল কর্মপ্রবাহে তারই বহিঃপ্রকাশ সহজেই অনুভূত। আধুনিক ধ্যানধারণার প্রতিভাস বেসরকারি ব্যাংকিং জগতের সফল ব্যক্তিত্ব ও পথপ্রদর্শক কর্মবীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এরই পরম্পরায় হয়েছেন অত্যুজ্জ্বল।

অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু শুধু শুদ্ধতম ব্যবসায়ী সমাজের পথিকৃৎ ছিলেন না; জামান শিল্প গোষ্ঠীর অত্যন্ত সফল একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের বেসরকারী খাতের দ্বিতীয় ব্যাংক তথা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) এবং জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ২০১১ সাল থেকে তিনি অন্যন্ত নিষ্ঠার সাথে আমৃত্যু ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পূর্বে বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে প্রথম কারখানা প্রতিষ্ঠার পর অসাধারণ দক্ষতায় একে একে গড়ে তোলেন আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যানআম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট নামে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাঁর অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছেভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট এবং বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল ক্রয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামসহ পুরো বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব নেতৃত্বদানের জন্য দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যবসায়ী নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি দু’বার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি ও ওআইসিভুক্ত ইসলামী চেম্বারের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিনিধি হিসেবে বরেণ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। দেশের একজন বরেণ্য ও নন্দিত রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন শিল্প উদ্যোক্তা এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে আখতারুজ্জামান বাবুর অবদান দেশবাসির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সমাজহিতৈষীদানবীর ও জনদরদী বাবু ভাই হাইলধর ইউনিয়ন ও থানা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সকল স্তরের মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ায় বহু স্কুলকলেজমাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অগণিত জনহিতকর কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তরদক্ষিণ চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র পরিকল্পনা ছিল সুবিস্তৃত। পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথেও যোগাযোগ কাঠামো তৈরিতে বাবু ভাইয়ের স্বপ্ন ও চিন্তাচেতনার প্রায়োগিক বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবারিত উন্নয়ন দর্শনে অতিসম্প্রতি দৃশ্যমান হয়েছে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। এটি অনস্বীকার্য যে, অদম্য উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়া যাওয়া বিশ্বস্বীকৃত বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁর নামাকরণে নির্মিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার তাঁকে চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে স্মরণে রাখবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ২০২১ সালে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইয়ের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক অর্জন তাঁর প্রতি দেশের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অকৃত্রিম স্তম্ভ হিসেবে চিরপ্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দুর্জয় সৈনিক ও প্রিয়ভাজন নিবেদিত রাজনীতিক প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর প্রয়াণ বার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মহান স্রষ্টার দরবারে তাঁর আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধউদালিয়া চা বাগানে পাহাড় ধসে চা শ্রমিকের মৃত্যু