পরিবেশ সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৩ মে, ২০২৫ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো প্রকল্প শর্তারোপ করেও অনুমোদন দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা জানি বড় বড় কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমাদের নদীগুলোকে দূষণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও বিষয়গুলোকে সমাধান করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মসংস্থানের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত নদীপারের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে কেউ ভাবে না। আমাদের ঢাকা শহরের মানুষকে পানি খাওয়ানোর জন্য মেঘনা নদীতে যাচ্ছি। আবার মেঘনা নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে আলাদা করে টাস্কফোর্স গঠন করতে হচ্ছে। কারণ সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হয়েছে। সেজন্য রাষ্ট্র ও ব্যক্তিপর্যায়ে পরিবেশকে মূল পর্যায়ে আনতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে না বলার অধিকার দিতে হবে এবং না শোনার মানসিকতাও সবার মধ্যে গড়ে ওঠা জরুরি। পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো প্রকল্প শর্তারোপ করেও অনুমোদন দেয়া যাবে না।

তিনি বলেন, পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছি। নানা সময় বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে মাটি কাটা থেকে শুরু করে ইটভাটা নিয়েও। সমপ্রতি ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষিজমির ওপর থেকে মাটি সরিয়ে নেয়ার প্রচুর অভিযোগ আসছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ৪০ ফুট গভীর করে কৃষিজমির মাটি কাটা হয়েছে ইটভাটায় সরবরাহ করার জন্য। এ দস্যুপনা এত বেশি সংঘটিত হয়ে গেছে যে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ আমরা যদি দিনের বেলায় এনফোর্সমেন্ট ক্ষমতা প্রয়োগ করি, তারা রাতের বেলায় পুনরায় সেসব কাজ করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আমাদের ইটের বিকল্প কিছু দিতে হবে। এ ইটের বিকল্প নিয়ে কথা বলা হচ্ছে ২০১২ সাল থেকে। সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হলো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন বেসরকারি খাতে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ও সরকারি খাতে শতভাগ ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার একটা পরিকল্পনা করছি। আমরা চাইলেই তৎক্ষণাৎ ইটের উৎপাদন বন্ধ করতে পারি না। কারণ বাজারে ইটের চাহিদা আছে। তাই ইটের উৎপাদন বন্ধে এর বিকল্প প্রয়োজন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা গত ১১ মে বণিক বার্তা আয়োজিত কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণপ্রকৃতি সম্মেলনের ‘কৃষি উৎপাদন ও প্রাণপ্রকৃতি’ বিষয়ক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এদিকে অল্পকিছুদিন আগে বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, উন্নয়নকে সব সময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে। আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক আইন থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুফল পেতে চাইলে সবাইকে একই মঞ্চে আনতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি সহজ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ আজ বড়ই বিপন্ন। পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। মানবজীবনও হুমকিতে পড়েছে। পরিণামে জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে পরিবেশ শরণার্থীর সংখ্যা।

পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ দূষণের শিকার সচেতন জনগণের মতে, বৃক্ষ নিধন ছাড়াও প্রাণী বৈচিত্র্য রক্ষা না করা, রাসায়নিক সার ব্যবহার করা, কলকারখানার বর্জ্য, পলিথিন ও পোড়া জ্বালানি, কালো ধোঁয়া, কীটপতঙ্গ ধ্বংস করা, বস্তির উদ্ভব, ঘনবসতি, ধূমপান, পানিতে মলমূত্র ও মৃত প্রাণীদেহ ফেলা, আর্সেনিক ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, গাড়ির হর্ণ ও মিলকারখানার শব্দ এবং অসচেতনতা ও শিক্ষার অভাব সর্বোপরি আইন অমান্য করা ও দেশপ্রেমের অভাবই পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে কাজ করছে। তাই সময় থাকতেই পরিবেশ সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব। বনাঞ্চল সংরক্ষণ, অবৈধ দখলদারি রোধ এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ বাস্তবায়নের জন্য জনগণ, সরকার এবং পরিবেশবাদীদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে