আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী এ দিবস উদযাপিত হয়। বিশ্বের বা একটি নির্দিষ্ট দেশের পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করার নিমিত্তে সুইডেনের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘ স্বীকৃত এ দিবসটি ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত বিশ্বের প্রথম পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল একটাই বিশ্ব, যা ৫০ বছর পূর্তিতে এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়। বিভিন্ন সময়ে পানি, ওজোন স্তর, এসিড বৃষ্টি, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, মরুকরণ, সবুজ অর্থনীতি, প্লাস্টিক দূষণ, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, বায়ুদূষণ, ইকো সিস্টেমসহ পরিবেশগত অন্যান্য বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে এ দিবসটি পালিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে : প্লাস্টিক দূষণের সমাধান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমগ্র বিশ্বে প্ল্যাস্টিক ও ইলেকট্রনিক দূষণ ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করেছে। ফেলে দেয়া বা ব্যবহার করা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স পদার্থ থেকে বেশ ভালমাত্রায় দূষণ ছড়ায়। উন্নত বিশ্বে ব্যবহার হওয়ার পর কম্পিউটার, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের মতো পুরনো ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য আনা হচ্ছে দেশে। এসব পণ্য থেকে দূষণ ছড়িয়ে মানবদেহে দেখা দিচ্ছে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগব্যাধি। ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সাধারণত মাটির সঙ্গে মেশে না। এসব যন্ত্রাংশ পচেও না। এসব যন্ত্রাংশে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ক্যান্সার, কিডনির জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের ব্যাধির অন্যতম কারণ এসব যন্ত্রাংশ। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর তিন কোটি মোবাইল ফোনসেট নষ্ট হচ্ছে। পাঁচ লাখ কম্পিউটার ও ল্যাপটপ নষ্ট হচ্ছে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর চার কোটি টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়। সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন ১৩ কোটির ওপরে মোবাইল ফোনসেট রয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি বাসাবাড়িতে নষ্ট মোবাইল ফোনসেট পাওয়া যাবে। এসব ই–বর্জ্য পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এরই মধ্যে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে জৈব পচনশীল পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে সরকার। একই সঙ্গে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার কিভাবে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়, সেই উপায় খুঁজছে সরকার। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের নাকের ডগায়ই সব কিছু চলছে প্রকাশ্যে। পরিবেশ অধিদফতরের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে সাড়ে আট শতাংশ প্ল্যাস্টিক বর্জ্য। সে হিসাবে প্রতিদিন দুই হাজার টন আর মাসে ৬০ হাজার টন প্ল্যাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি করা হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৫০হাজার কোটি প্ল্যাস্টিক ব্যাগ তৈরি করা হয়। প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৮০ লাখ টন প্ল্যাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য কখনও পচে না, যার কারণে এই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা মাছ পশুপাখির মাধ্যমে খাদ্যচক্রে ঢুকে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। পানি নিষ্কাশনের পথও রুদ্ধ করছে এই প্লাস্টিক বর্জ্য। এদিকে পরিবেশদূষণ রোধে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। জার্মানভিত্তিক সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব পণ্য আমদানীর বিষয়ে কঠোর হচ্ছে সরকার। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই–বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা ২০১৮ বিধিমালায় পুরনো বা ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে পরিবেশ অধিদফতর। বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘দাতব্য, অনুদান বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন পুরনো বা ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি অনুমোদন করা হইবে না।’ সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিলেও পরিবেশ বিপর্যয় কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরো কঠোর হতে হবে।