বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘পরিবেশ–পরিস্থিতি’ দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যাচ্ছেন।
আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের নাফ নদী পার হয়ে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের মংডু শহরে যাবেন বলে জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিনিধিদলে থাকবে ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তারাও থাকবেন
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ‘রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি কতোটুকু অনুকূলে’ রয়েছে মূলত তা দেখবে যাবে। আরআরআরসির তথ্য মতে, মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমুড়া এলাকায় অবস্থিত ২৪, ২৬ ও ২৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে বাছাই করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তারা বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই–বাচাই করেন। প্রতিনিধিদলটি টানা সাতদিন টেকনাফের স্থলবন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। আর তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধিদলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। ওই সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেই সব রোহিঙ্গা যাতে আগে থেকে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল আজ রাখাইন যাচ্ছেন।
প্রতিনিধিদলের রোহিঙ্গা নেতারা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের তালিকায় আছেন কিনা তা জানা যায়নি। আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা রাখাইনে যাচ্ছেন তা এখনও জানা যায়নি। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। প্রতিনিধিদলের হয়ে যে সব রোহিঙ্গা রাখাইনে যাচ্ছে তারাই সেখানে মূলত মূখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
‘যেহেতু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে, তাই তাদের সরেজমিন অভিজ্ঞতা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি রাখাইনের পরিবেশ–পরিস্থিতি অনুকূল দেখে আশ্বস্ত হলে তা প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন এ শরণার্থী কমিশনার।
প্রতিনিধিদলে নাম থাকা ২৬ নাম্বার ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা (হেড মাঝি) বজলুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, বিকালে আমাদের দিক–নির্দেশনা দেওয়া হবে ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে। হয়তো প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আজকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হবে টেকনাফ সদরের রেস্টহাউজ কিংবা আবাসিক হোটেলে। সেখান রাত যাপনের পর শুক্রবার (আজ) সকালে যাত্রা করবো মংডুর উদ্দেশে।
ইউএনও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে থাকতে প্রতিনিধিদলের জন্য টেকনাফ সদরে তিনটি হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া–টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।