পরিবেশ আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে

‘পুকুর ও দীঘিশূন্য হচ্ছে নগর’

| শনিবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

পুকুর, দীঘি, জলাধারগুলো শহরের পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রকৃতির আধার। গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী পুকুরগুলো বৃষ্টির পানি ধারনের একমাত্র আধার ও মানুষের গৃহস্থালি কাজের পানি এবং পুরনো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিবেশের প্রয়োজনে ভূমিকা রেখে চলছিল। কিন্তু সরকারি নজরদারির অভাবে ভরাট এবং দখল প্রক্রিয়ায় জনগুরুত্বপূর্ণ এ পুকুর-দীঘিগুলো তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু পুকুরগুলো কেবল সরকারি উদ্যোগের অভাব ও অবহেলায় নিঃশেষ হয়ে যাবে, সেটা সচেতন নাগরিক মেনে নিতে পারে না।
গত ২৬ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘পুকুর ও দীঘিশূন্য হচ্ছে নগর, দু’যুগে বিলীন অন্তত ২০ হাজার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আন্দরকিল্লায় রাজার পুকুরে যাওয়ার রাস্তাকে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয়েছে রাজা পুকুর লেইন। রাস্তাটি আছে। কিন্তু পুকুরটির অস্তিত্ব নেই। ওই এলাকায় যে মাত্র বছর কয়েক আগেও বড়সড় একটি পুকুর ছিল তার কোনো চিহ্ন আর অবশিষ্ট নেই। একইভাবে দেওয়ান বাজারের দেওয়ানজি পুকুরে যাওয়ার রাস্তাটির নামই দেওয়ানজি পুকুর লেইন। এখানেও রাস্তাটি আছে। কিন্তু পুকুরটির অস্তিত্ব নেই। ওই এলাকায়ও যে একটি পুকুর ছিল তার কোনো চিহ্ন নেই। এভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীর রাজার পুকুর কিংবা রানীর পুকুরের পাশাপাশি গায়েব হয়ে গেছে কাজীর পুকুর। মুন্সির পুকুর। মিয়াদের পুকুরসহ বহু পুকুর। গত দুই যুগে নগরীতে বিলীন করে দেয়া হয়েছে অন্তত বিশ হাজার পুকুর। ভূমির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নগরীতে একের পর এক পুকুর ও দীঘি ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে নগরীর আশকারদীঘি, বলুয়ারদীঘি ও ঢেবাসহ বড়বড় যেসব জলাধারগুলোও টিকে আছে তাও বর্তমানে চতুর্মুখী ভরাটের কবলে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পুকুর দীঘি ও জলাশয় ভরাটের মাধ্যমে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের বহুমুখী সংকট তৈরি করা হচ্ছে। পরিবেশের সুরক্ষায় পিএস এবং বিএস জরিপে চিহ্নিত পুকুরগুলো উদ্ধার করারও দাবি উঠছে।
একসময়ে পুকুরের জন্য বিখ্যাত শহর চট্টগ্রাম আজ তার সেই ঐতিহ্য হারিয়ে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন- সেই কথাটি ব্যক্ত হয়েছে প্রতিবেদনে। নগর থেকে হারিয়ে গেছে বিশ হাজার পুকুর ও অনেকগুলো জলাশয়। সেখানে গড়ে উঠেছে অট্টালিকা, মার্কেট, ট্রাক স্ট্যান্ডসহ নানা ধরনের স্থাপনা। আবার কোনো কোনো জলাশয় ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এমনকি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের মতো পদক্ষেপ চলছে। দেশে পুকুর ও জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সে আইন এখানে অচল হয়ে আছে। বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি খোদ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নগরের ফুসফুস খ্যাত পুকুর ও জলাশয়গুলো ভরাট করেছেন। এ ধারা যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে।
আশার কথা, সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে ৯২৫ পুকুর, দীঘি ও জলাশয় খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শতকরা ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে ধরা ছিল ৮০৯ পুকুর, দীঘি ও জলাশয়। পরে সংশোধিত হয়ে পুকুর, দীঘি ও জলাশয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৫টি। ইতোমধ্যে ৫৭৪ পুকুর, দীঘি ও জলাশয় পুনর্খনন-সংরক্ষণ-সংস্কার এবং নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩৫১ পুকুর, দীঘি ও জলাশয় পুনর্খনন-সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হবে বর্ষা চলে যাওয়ার পরই করা হবে। পুকুর-দীঘি-জলাশয়গুলো পুনর্খনন ও সংস্কার কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের জটিলতার শিকার হতে হয়েছে। পুকুরগুলো সরকারি সম্পত্তিতে থাকলেও অনেকেই দীর্ঘকাল ধরে ভোগ দখল করে যাচ্ছে। সেখান থেকে পুকুরগুলো উদ্ধার করা খুবই জটিল কাজ ছিল।
উন্নয়নের নামে পুকুর-দীঘি-জলাধারগুলো ভরাট করে ড্রেন, ইমারত কিংবা যে কোনো স্থাপনায় রূপান্তরের কার্যক্রম পরিবেশ আইন ১৯৯৫ ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই অবিলম্বে দেশে পরিবেশ আইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে