নগরে পাহাড় কাটা ও পুকুর–জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীরা গাছপালা কাটলেও এসব অপরাধ দমনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে লিখবেন বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের (ষষ্ঠ) ৪০তম সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। সকালে লালদিঘি পাড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়র নগরে পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পাহাড় নিধন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি পাহাড় কাটা বন্ধ এবং নদী–নালা–খালের ভূমি রক্ষাসহ চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
মেয়র বলেন, শহরের সব পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। খাল–নালা দখল করে স্থাপনা উঠছে। পুকুর–জলাশয় ভরাট করছে একটি দুষ্টচক্র। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি গিয়ে নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ও মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেখেছি, নালাগুলোতে পলিথিন এবং ককশিটের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা এ মৌসুমে পাঁচ লক্ষ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব, চিঠি দেব।
সভায় কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম অভিযোগ করেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে এবং বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সভায় নগরে পে–পার্কিং চালু ও হকার উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সিডিএসহ সবার সঙ্গে আবার বসব। খালের কিছু কিছু জায়গায় মাটি রয়ে গেছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। পে–পার্কি চালু এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সভায় বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সিডিএকে অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বায়েজিদে চন্দ্রনগরে একসময় বিশাল নাগিন পাহাড় ছিল। কাটতে কাটতে এটাকে অস্তিত্বহীন করে ফেলেছে। গতকাল (সোমবার) ওখানে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন। এই ভবনের অনুমোদন আছে কিনা তা দেখতে হবে। পাহাড় কেটে বা নদী–নালা–খাল ভরাট করে কেউ বাড়ি বানাতে চাইলে সে বাড়ির অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সিডিএকে আরো তৎপর হতে হবে।
সভায় হকার উচ্ছেদের বিষয়ে মেয়র বলেন, অবৈধ হকারের বিষয়ে যদি আমরা ছাড় দিতে থাকি তাহলে ভবিষ্যতে অবৈধ হকাররাও শহরের নিরাপত্তার বিষয়ে একই ধরনের জটিলতা তৈরি করবে। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ দোকানের কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ ফুটপাতে হাঁটতে পারছে না। জনগণের স্বার্থেই আমি নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ বিভাগ আমাদেরকে অনেক সহায়তা করেছে। তবে উচ্ছেদের পর প্রতিটি থানা মনিটরিং করলে উদ্ধারকৃত ভূমি রক্ষা করা সহজ হতো। কারণ আমাদের কোনো ফোর্স নেই। যে কারণে উচ্ছেদ করার কিছুদিনের মধ্যেই আবারো উদ্ধারকৃত স্থান দখল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আসন্ন ঈদুল আজহার সময় পুলিশ বিভাগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ঈদে যেহেতু শত শত কোটি টাকার লেনদেন হবে, মানুষ যাতায়াত করবে, তাই নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।
কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোরবানির দিন দ্রুততম সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো সুপারভাইজারের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আবার যারা ভালো পারফরম্যান্স করবে তাদের পুরস্কৃত করব। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কাউন্সিলররা এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করবেন না। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে কাউন্সিলরদের কঠোর হতে হবে।
সভায় কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে ওয়াসার পানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী নালার উপর যাতে কেউ স্থাপনা নির্মাণ না করতে পারেন সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল সিডিএর প্রতিনিধিকে লালখান বাজারে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন। সভায় মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম হলিডে মার্কেটের ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে গণপূর্ত এবং রেলওয়ের সাথে চসিক কাজ করছে বলে জানান।