প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মাইনী নদী। মাইনীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ দীঘিনালা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি সবুজ জনপদ ‘মাইনী উপত্যকা’ হিসেবে পরিচিত। মাইনীর তীরজুড়ে এখন রবি ফসলের প্রাচুর্য। তবে এখানে সবার চেয়ে আলাদা প্রিয়দর্শী চাকমা। প্রায় দুই দশক ধরে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত প্রিয়দর্শী প্রচলিত কৃষির বৃত্ত ভেঙে বিষমুক্ত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। মানুষের খাবারের পাতে বিষমুক্ত খাবার তুলে দিতেই তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন পরিবেশবান্ধব বালাই নাশক।
সরেজমিনে শীতের সকালে প্রিয়দর্শীর সবজির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কামুক্যাছড়ায় মাইনী নদীর তীরে প্রায় ১৬০ শতক জমিতে বাহারি ফসলের প্রাচুর্য। ফুলকপি, ক্ষিরা, মরিচ, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে চার দফার বন্যার পরও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন। পরিবেশবান্ধব বালাই নাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত সবজির চাহিদাও বেশি। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় টন ফুলকপি বিক্রি করেছেন তিনি যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে প্রায় ২ হাজার ৫শ কেজি মুলা ও ২ হাজার কেজি ক্ষিরা বিক্রি করে আয় করেছেন কয়েক লক্ষ টাকা। এবার প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তিনি।
বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রসঙ্গে প্রিয়দর্শী চাকমা বলেন, ২০০২ সাল থেকে আমি কৃষির সঙ্গে জড়িত। মূলত অর্গানিক কৃষি নিয়ে কাজ করি। মাইনী নদীর তীরবর্তী জমিতে প্রচুর পলি পড়ে এবং উৎপাদনও বেশ ভালো। এখানে ফুলকপি, মুলা, মরিচ, ক্ষিরাসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছি। আমি কীটনাশক ব্যবহার করি না। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর কথা ভেবে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষবাস করি। এ কারণে আমার ক্ষেতে উৎপাদিত সবজির কদরও বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ক্ষেতে এসে কিনে নিয়ে যান।
তিনি আরো বলেন, অসচেতন অনেক কৃষক মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে। পুরো উপজেলায় বছরে অন্তত ২ থেকে ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের কীটনাশক বেচাকেনা হয়। এসব বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের শরীরেই যাচ্ছে। কৃষক সচেতন না হলে কীটনাশকের অপব্যবহার কমবে না। এতে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। ধানের জন্য যে কীটনাশক তৈরি করা হয়েছে কৃষক সেটা সবজি চাষে ব্যবহার করছে।
বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কৃষক প্রিয়দর্শীর কৃষি উদ্যোগ ব্যতিক্রম। তিনি মূলত অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করেন। তার উৎপাদিত সবজির চাহিদাও বেশ। আমরা সবসময়ই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আমরা তাকে (প্রিয়দর্শী) প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করছি।