প্রতি বৃহস্পতিবার আমার মা আমাদেরকে দিয়ে আমার বাবার সেন্ডেল, গেঞ্জি, তোয়ালে ইত্যাদি পরিষ্কার করাতেন। সন্ধ্যা নামার আগে আমরা সুন্দর পোশাকে বাবার জন্য অপেক্ষা করতাম। বড় দু‘ভাই সহ বাবা, শহর থেকে বাড়িতে এলে আমরা সবাই অভিবাদন জানাতাম। বাবাকে পরিবারের প্রধান ব্যক্তি মনে করে মা গুরুত্ব দিতেন। বাবাও মাকে একই গুরুত্ব দিতেন। আবার, বাবার চেয়ে সম্মানিত কেউ এলে বাবার গুরুত্ব একটু কমিয়ে ঐ অতিথিকে প্রধান অতিথির মর্যাদা দিতেন। কোন অফিসে বসের পরিবর্তে জুনিয়র যদি অধিক গুরুত্ব পায় তাহলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রধান সেনাপতির পরিবর্তে অধিনস্থ সৈনিককে যদি বেশি পাওয়ার দেওয়া হয় তাহলে যুদ্ধ জয় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মা বাবার যথাযথ গাইডেন্সের অভাবের কারণে যদি সন্তানেরা মনে করে তারা পরিবারের প্রথম শ্রেণির সদস্য, মা–বাবা দ্বিতীয় শ্রেণি, দাদা–দাদী তৃতীয় শ্রেণির তখন তারা কোন যোগ্যতা অর্জন করতে চাইবে না এবং সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান, অবস্থান, সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হবে, তাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখবে না। কোনটা লজ্জার বিষয় কোনটা অহংকারের এই পার্থক্য তৈরি করতে পারবে না। সন্তানকে সামাজিক দায়বদ্ধতা শিখাতে হবে। বুঝাতে হবে, মানুষের মর্যাদা শুধু ভালো রেজাল্ট বা পদ পদবিতে নয়। আমরা যদি পরিবারের মধ্যেই বড়–ছোট, মান–সন্মান, শ্রদ্ধা–স্নেহ–ভালোবাসার চর্চা করে দায়িত্বশীল, বিবেকবান, সহানুভূতিশীল সন্তানের দীক্ষা দিতে পারি তবেই তারা জীবন দক্ষতা শিখবে। অন্যথায় এই পচা সন্তানের জন্য প্রথম লজ্জাটা আপনিই পাবেন।