পরিবারের সদস্যসহ এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

স্ত্রী-মেয়েকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

| বুধবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মানবপাচারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদিকে অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে দুদকের মামলায় আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন থানায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আল আমিন হোসেন বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাংসদ কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল (৫৭), তার ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির (৩৫), পাপুুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান (২৩), পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম (২৬), পাপুলের ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন, জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা (৫৬), জেসমিন প্রধানের মালিকানাধীন কোম্পানি জে. ডব্লিউ লীলাবালী ও লিটনের মালিকানাধীর জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ভিকটিম প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অভিযুক্ত ৮ জনসহ আরও ৫-৬ জন সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের মাধ্যমে ন্যূনতম ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা অবৈধ আয় করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংক্রান্তে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনানুযায়ী অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্তরা মানবপাচারের মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অপরাধের মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জন, ভোগ ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর করা আইনানুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পাপুল ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত আয়ের প্রকৃত উৎস গোপনের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে জমা ও স্থানান্তর করে নামে-বেনামে সম্পদে রুপান্তর করেছেন মর্মে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।
সিআইডির সিনিয়র এএসপি জিসানুল হক জিসান জানান, পাপুলসহ ৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করবে।
এদিকে অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে দুদকের মামলায় আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ওই মামলায় জামিন সংক্রান্ত এক আবেদনের বিষয়ে শুনানি তাদেরকে ওই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেয়।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর পাপুলের স্ত্রী ও মেয়েকে আত্মসমর্পণ করতে ১০ দিনের সময় দেওয়া হলেও নিম্ন আদালতের অবকাশকালীন ছুটির কারণে তারা তা করতে পারেননি। তাই সময় চেয়ে তারা হাই কোর্টে আবেদন জানান। সে আবেদনের শুনানি করে হাই কোর্ট তাদের আত্মসমর্পণে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিল।
পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তাতে অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়।
মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ইসলাম ও দুলাভাই শহিদ ইসলাম পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালি’ নাসের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে শুধুমাত্র এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বিধায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি।
পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ত ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নয়নের কথা বলে সরকার বিভ্রান্ত করছে : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধবিমানের মাস্কাটগামী সব ফ্লাইট বাতিল