পরিবহন সেক্টরে স্থবিরতা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল অর্ধেকে, ভাড়াও কমেছে

হাসান আকবর | বুধবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

অলস বসে আছে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। প্রত্যাশিত ভাড়া জুটছে না। ২৫ হাজার টাকার স্থলে নাম মাত্র ভাড়ায় এক ট্রাক পণ্য পরিবহনের ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল তা ৮৯ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। ফিরতি পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ডাউন ট্রিপে ২০২২ হাজার টাকার ভাড়া ১৩১৪ হাজারে চলছে। জ্বালানি তেলের চড়া দামের মধ্যে আয় কমে যাওয়ায় পরিবহন সেক্টরে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে। ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন অন্তত ২৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করত। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সবকিছু মিলে পুরো সেক্টরে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

জানা যায়, দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনের প্রায় পুরোটা পরিচালিত হয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য দেশের নানা স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আইসিডি এবং বন্দরের অভ্যন্তরে আনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অসংখ্য ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার পরিবহন কেনার পেছনে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের অনেক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দরসহ আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে পণ্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আনানেওয়াসহ দেশে পণ্য পরিবহনে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর দিয়ে দৈনিক অন্তত ৩০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করে।

বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মিলে চট্টগ্রামে ৩৫ হাজারের বেশি গাড়ি রয়েছে। সারা দেশে এই ধরনের গাড়ির সংখ্যা ছয় লাখের বেশি। যার অধিকাংশই বন্দরের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে চলাচল করত। বর্তমানে এই সংখ্যা ৪৫ হাজারে নেমে এসেছে। বন্দরের পণ্য পরিবহন গড়ে ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান পরিবহন ব্যবসায় জড়িতরা। তারা বলেন, সেক্টরটিতে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় ভাড়ার পরিমাণও অনেক কমে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে পুরো সেক্টরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ট্রাক ভাড়া মাত্র ৩ হাজার টাকায় নেমে আসে। গতকাল তা ৮/৯ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। এই ভাড়া দিয়ে চালকসহকারীর বেতনভাতা এবং জ্বালানি তেলের খরচও মিটছে না। ডাউন ট্রিপের আশায় অধিকাংশ মালিক কম ভাড়ায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ঢাকাসহ দেশের নানা অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ডাউন ট্রিপের অবস্থাও বেহাল।

একাধিক পরিবহন ব্যবসায়ী গতকাল আজাদীকে বলেন, আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যান ঢাকা যেতে ২৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়া নিত। তা আজ (গতকাল) ৯ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এই টাকায় তেলের খরচও উঠছে না।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুস সবুর আজাদীকে বলেন, ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। বাজারে ট্রাকের চাহিদা নেই, ভাড়া নেই। শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান অলস বসে আছে। যেগুলো পণ্য নিয়ে ঢাকা বা দূরে যাচ্ছে সেগুলোও কম ভাড়ায় চলাচল করছে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) /৯ হাজার টাকায় একেকটি ট্রাক পণ্য নিয়ে ঢাকা গেছে। ডাউন ট্রিপ আসছে ১২১৩ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের চড়া দামের মধ্যে এই টাকায় পণ্য পরিবহন করে টিকে থাকা কঠিন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে একাধিক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, এই অবস্থা কতদিন চলবে তা অনিশ্চিত। পরিস্থিতি খারাপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট বিআরটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী খাত
পরবর্তী নিবন্ধচিন্ময়ের জামিন শুনানি ২ জানুয়ারি