পরিবর্তন আসছে পরীক্ষা পদ্ধতিতে

| শুক্রবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ তুলে দেয়া হচ্ছে। তবে জিপিএ-৫ বাদ দেয়া হলেও সর্বোচ্চ গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে জিপিএ-৪। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গ্রেডিং সূচকের সাথে সমন্বয়ের জন্য এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং এ বছরই তা চালু করার চেষ্টা তাদের রয়েছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও সংস্কার আনার কথা বলা হচ্ছে। স্কুল-কলেজে পরীক্ষা কমিয়ে বছর জুড়ে মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা এবং গ্রেডিং পদ্ধতিতে সংস্কার বা পরিবর্তন আনা সম্ভব হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে। তবে পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা বেশ কঠিন। খবর বিবিসি বাংলার।
জিপিএ-৫ কেন তুলে দেয়া হচ্ছে : দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বিদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেড ৪ এর মধ্যে রয়েছে। এর সাথে সমন্বয় আনার জন্য এই পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়, এই চাপ কমানোটাও একটা বড় টার্গেট। আপনারা জানেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য একটা উন্মাদনা দেখা দেয়। জিপিএ-৫ পেতেই হবে, তা না পেলে যেনো জীবন অসাড় হয়ে যাবে, এনিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিকভাবে একটা প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এটা সামাজিক এবং পারিবারিক একটা বিরাট চাপ তৈরি হয়, বলেন তিনি। তিনি মনে আরো বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য ভালো নয়। তিনি উল্লেখ করেন, এই চাপ কমানোর বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জিপিএ-৫ তুলে দেয়া হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে উচ্চশিক্ষার সাথে একটি সামঞ্জস্য তৈরি হলেও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে না।
গ্রেড পরিবর্তন কীভাবে : বর্তমানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে সেটিকে জিপিএ-৫ বলা হয়। এখন কেউ গড়ে ৮০ নম্বর পেলেও তাকে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ গ্রেড দেয়া হয়। আবার কেই গড়ে ৯৯ নম্বর পেলেও একই গ্রেড দেয়া হয়। কিন্তু কেউ গড়ে ৭৯ নম্বর পেলেও তার জিপিএ-৫ গ্রেড হয় না। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পার্থক্য কমিয়ে আনার জন্যই কয়েকটি স্তরে ভাগ করার জন্য সংস্কার করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন তিনটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। সেখানে সেখানে ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে জিপিএ-৪ ধরা হবে। আরেকটি প্রস্তাবে ৯৫ থেকে ১০০ নম্বর পেলে জিপিএ-৪ গ্রেড দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বরকে ২৫ দিয়ে ভাগ করে যে ফল হবে সেটিকে ধরার কথা বলা হচ্ছে। এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
গ্রেড পরিবর্তনের সময় : গত বছরই এই পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর গ্রেডিংয়ে পরিবর্তন আনা যায়নি। এ বছর জিপিএ-৪ গ্রেড পদ্ধতি চালুর চেষ্টা তারা করবেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষা বর্ষের শুরুতে সিদ্ধান্ত সুনির্দিষ্টভাবে বলা না হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা হবে।
পরীক্ষা কমিয়ে মূল্যায়ন : দেশে ইতোমধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না নিয়ে বছর জুড়ে মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও পরীক্ষার কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাথীদের ওপর পরীক্ষার অনেক বেশি চাপ। সেজন্য গ্রামাঞ্চল থেকে নগরী-বিভিন্ন পর্যায়ে সীমিত পরিসরে বা পাইলট হিসাবে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষার বদলে মূল্যায়ণ ব্যবস্থা করে আমরা দেখেছি। তাতে বেশ ভালো ফল পা্‌ওয়া গেছে। সেজন্য এটি নিয়ে কাজ করছি। তিনি জানিয়েছেন, মূল্যায়নের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। সেই প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে মূল্যায়নের সঠিক পদ্ধতি বের করবে। তিনি বলেছেন, মূল্যায়নের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন বেশ কঠিন। তবে কিছু বিষয়ে পরীক্ষা এবং কিছু বিষয়ে মূল্যায়ণ-এভাবে শুরু করা যায় কিনা- সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিং এর এই পরিবর্তন গত বছরই চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা করা সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোট ডাকাতি করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে : শাহাদাত
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ট্যাক্স কার্ড নিলেন আজাদী সম্পাদকসহ ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান