পতেঙ্গার যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রকল্পের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল প্রকল্প, আউটার রিং রোড প্রকল্প এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পতেঙ্গা অংশে পরিবর্তন এনে জিওমেট্রিক ডিজাইনের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেতু মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব গতকাল প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প পরিদর্শনে এসে পতেঙ্গা অংশের ডিজাইন পাল্টানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। সচিবের নির্দেশনায় তিন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বসে একটি ডিজাইন তৈরি করবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, নগরীর অন্যতম পর্যটন এলাকা এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জ্বালানি তেল শোধনাগার, ড্রাইডক, জ্বালানি তেলের প্রধান ডিপোসহ নানা কারণে পতেঙ্গা চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। কিন্তু যোগাযোগসহ নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত অবহেলিত একটি এলাকা ছিল পতেঙ্গা। সাগরপাড়ের এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন থাকলেও তা খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি কখনো। গত বছর কয়েক ধরে পতেঙ্গা উন্নয়নের মূলধারায় চলে আসে। বিশেষ করে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই বাঁধ নির্মাণের সময় একই সাথে রাস্তা নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আবার ওই বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণে পর্যটনকেও ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে করে আউটার রিং রোড প্রকল্প বহুমুখী সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। আউটার রিং রোড এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে যখন কাজ শুরু হয় তখন কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল নির্মাণের কার্যক্রমও শুরু হয়। টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর অপরপাড়কে সংযুক্ত করে চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই’র আদল দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কর্ণফুলীর ঠিক কোন অংশে টানেল নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে বেশ কয়েকদফা বৈঠক হয়, সমীক্ষা চালানো হয়। অবশেষে পতেঙ্গায় কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে করে পতেঙ্গার গুরুত্ব আরো একধাপ উন্নীত হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পতেঙ্গায় টানেল হয়ে চলাচলকারী এক কোটি চল্লিশ লাখের মতো গাড়ির পাশাপাশি এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে ধরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতকারী গাড়ি এবং আউটার রিং রোড ধরে চলাচলকারী গাড়ির বিশাল এক চাপ তৈরি হবে। এই বিপুল সংখ্যক গাড়ির পাশাপাশি পতেঙ্গা সী বিচে বেড়াতে যাওয়া মানুষের হাজার হাজার গাড়িও রাস্তায় থাকবে। সবকিছু মিলে পতেঙ্গা এলাকায় গাড়ির যে চাপ তৈরি হবে তা আউটার রিং রোড, টানেলের মুখ কিংবা এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের ল্যান্ডিং পয়েন্টের গাড়ির চাপ সামলাতে হিমশিম খাবে। বিপুল সংখ্যক গাড়ির জটলায় পুরো এলাকার যান চলাচলে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিষয়টি মাথায় রেখে পতেঙ্গা এলাকায় এমন একটি ডিজাইন করতে হবে যাতে কোনোভাবেই যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। কারণ পতেঙ্গায় এলাকায় যান চলাচলের জটলা তৈরি হলে অন্তত বিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টানেল, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে এবং আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই ভেস্তে যাবে। যান চলাচল স্বাভাবিক এবং গতিশীল রাখতে হলে পতেঙ্গা এলাকায় এমন একটি ডিজাইন করতে হবে যাতে কোনো রাস্তার গাড়ি অন্য রাস্তার গাড়িকে ডিস্ট্রার্ব না করে। এক রাস্তা থেকে যাতে সহজে অন্য রাস্তায় গাড়ি যেতে পারে। প্রতিটি রাস্তায় যাতে আন্তঃসংযোগ থাকে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে নতুনভাবে ডিজাইন করতে গেলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হবে। নতুন রাস্তা ভাঙতেও হতে পারে। তাই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই জিওমেট্রিক ডিজাইনের মাধ্যমে রাস্তাগুলোর মাঝে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক গত ৩১ মে এই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলেও নানা সমস্যায় তিনি টানেল প্রকল্প পরিদর্শনে আসতে পারেননি। গতকাল তিনি প্রথমবারের মতো টানেল পরিদর্শনে আসেন। এই সময় টানেল নির্মাণে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব জিওমেট্রিক ডিজাইনের মাধ্যমে যান চলাচলের বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে টানেল নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সিডিএ’র আউটার রিং রোড এবং এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রকৌশলীদের সাথেও কথা বলেন। দুইটি সংস্থার প্রকৌশলীরা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে নতুন করে জিওমেট্রিক ডিজাইন করবেন বলেও সূত্র নিশ্চিত করে।
জিওমেট্রিক বা জ্যামিতিক ডিজাইন হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিভিন্ন বিষয়গুলোকে হিসেব নিকেশ করে গাণিতিক মূলনীতি এবং জ্যামিতিক ডিজাইনে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা হয়। পতেঙ্গায় বিশেষ এই ডিজাইনের আশ্রয় নেয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টানেল, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড এবং সী বিচের গাড়ির নির্বিঘ্ন চলাচল।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে থাকার কথা উল্লেখ করেন। সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় প্রকল্প পরিদর্শন করে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সচিব মহোদয় এসেছিলেন। তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিষয়টি খেয়াল রেখে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি যান চলাচল নির্বিঘ্ন এবং গতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।